বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১
শিরোনাম

রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতের শেষ প্রহরে কী আমল করতেন


  আরবান ডেস্ক

প্রকাশ :  ০৬ মার্চ ২০২৫, ১২:২১ দুপুর

ছবি: সংগৃহীত

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের শেষ রাতের আমল নিয়ে আমরা আগের দুই পর্বে আলোচনা করেছি। আজকের শেষ পর্বে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল তুলে ধরা হলো।  

রাতের শেষ প্রহরে রাসুল (সা.) দীর্ঘ সময় আল্লাহর জিকির করতেন ও দোয়া করতেন। বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ আছে, তিনি এই সময়ে গভীরভাবে আল্লাহর স্মরণে মগ্ন থাকতেন এবং কেঁদে ফেলতেন। (বুখারি, হাদিস: ১১২০; মুসলিম, হাদিস: ৭৭২; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৭২৯; তিরমিজি, হাদিস: ২৬২)  
 
রাসুলুল্লাহ (সা.) তিন রাকাত বিতর নামাজ আদায় করতেন। কখনো কখনো তিনি প্রথম রাকাতে সূরা আলা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করতেন। কিছু সময় তিনি সূরা ফালাক ও সূরা নাসও পড়তেন। মাঝে মাঝে তিনি স্ত্রীদেরও বিতর নামাজ পড়ার জন্য জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি, হাদিস: ৫১২, ৯৯৭; মুসলিম, হাদিস: ৭৪৪; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৭২০; তিরমিজি, হাদিস: ৪৬২)  

যারা শেষ রাতে জেগে ওঠার ব্যাপারে নিশ্চিত, তাদের জন্য তখন বিতর পড়া উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'তোমাদের রাতের শেষ নামাজ হিসেবে বিতর আদায় করো।' (বুখারি, হাদিস: ৯৯৮) তবে যারা শেষ রাতে ওঠার বিষয়ে নিশ্চিত নন, তাঁদের এশার নামাজের পরই বিতর পড়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। (আল-মুহিতুল বুরহানি, ২/২৬৫; ফতোয়া খানিয়া, ১/২৪৪; ফাতহুল কাদির, ১/৪০৯)  

বিতর নামাজের পর রাসুল (সা.) বিশেষ দোয়া পড়তেন। তিনি তিনবার বলতেন, 'সুবহানাল মালিকিল কুদ্দুস,' যার অর্থ হলো—'মহামালিক, মহাপবিত্র সত্তার জন্য মহিমা।' তৃতীয়বার তিনি দোয়াটি লম্বা করে পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৬,৯৪৩; তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৬৬; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৫,৩৫৪)  

জীবনের শেষদিকে রাসুল (সা.) প্রায় প্রতি রাতেই জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে যেতেন এবং মৃতদের জন্য দোয়া করতেন। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) কবরবাসীদের উদ্দেশে বলতেন, 'আসসালামু আলাইকুম! তোমাদের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা তোমরা পেয়েছ। অপেক্ষা করো আগামী দিনের। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরাও আসব। হে আল্লাহ! বাকি গারকাদবাসীদের ক্ষমা করে দিন।' (মুসলিম, হাদিস: ৯৭৪; আবু দাউদ, হাদিস: ৩২৩৭)  
 
রাসুলুল্লাহ (সা.) মাঝেমধ্যে তার মেয়ে ফাতেমা (রা.) ও জামাতা আলি (রা.)-কে রাতের নামাজের জন্য জাগিয়ে দিতেন। এক রাতে তিনি তাদের বাড়িতে গিয়ে বলেন, 'তোমরা কি নামাজ আদায় করছ না?' আলি (রা.) উত্তরে বলেন, 'আমাদের আত্মাগুলো তো আল্লাহর হাতে, তিনি যখন ইচ্ছা করবেন, তখনই জাগিয়ে দেবেন।' রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যান এবং পথিমধ্যে বলেন, 'মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্কপ্রিয়।' (বুখারি, হাদিস: ১১২৭; মুসলিম, হাদিস: ৭৭৫)  
 
রমজান হোক বা সাধারণ দিন, রোজা রাখার নিয়তে রাসুলুল্লাহ (সা.) শেষ রাতে সাহরি খেতেন। তিনি বলেন, 'সাহরি খাও, কারণ এতে বরকত রয়েছে।' (বুখারি, হাদিস: ১৯২৩) অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেছেন, 'যে রোজা রাখার নিয়ত করেছে, সে অল্প হলেও সাহরি খাবে, এক ঢোক পানি হলেও।' (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৯০০৯-৯০১০)  

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রাতের শেষ প্রহরের এই আমলগুলো আমাদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তার জীবনধারা অনুসরণ করে আমরা আমাদের রাতগুলো আরও বরকতময় করে তুলতে পারি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত