একজন খবিরুল আহসান; যার হৃদয়জুড়ে
মো. খবিরুল আহসান। কর্মোদ্বীপ্ত অথচ নিভৃতচারী এক উপজেলা নির্বাহী অফিসার। উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলায় এটি তার প্রথম কর্মস্থল। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগমূহুর্তে বর্তমান কর্মস্থলে তিনি যোগদান করেন। যোগদানের পর পরই নির্বাচন কেন্দ্রিক ব্যস্ততা, নির্বাচন পরবর্তীতে নতুন ধারার কার্যক্রমের সাথে সমন্বয়ে নানানমাত্রিক জটিলতা, তাকে বিব্রত করতে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে অহেতুক উদ্ভট কিছু অপ-তৎপরতা, বিগত জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তার বিচক্ষণ ও দায়িত্বশীল প্রশাসনিক ভূমিকা, অন্তর্বতীকালীন সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক কার্যক্রম গতিশীল করতে তার উদ্যোগ, সর্বোপরি যোগদান পরবর্তী প্রায় এক বছরের সিংহভাগ সময়ই তাকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু পরিস্থিতি মোকাবেলায়।
অতসব ব্যস্ততার পরও স্বল্পতম সময়ে তিনি মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ এই পদটিকে উপজেলার সর্বমহলে সমাদৃত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাকে ব্যকুল থাকতে দেখা গেছে জনআকাঙ্খা পূরণে। কর্মস্থলটিকে তিনি নিজের মতন করে ভীষনভাবে আপন করে নিয়েছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনে প্রতিটি পদক্ষেপে তার কাজের সৃষ্টিশীলতা প্রকাশ পেয়েছে দারুণভাবে।
দেশের অপরাপর অঞ্চলের সাথে তুলনা করলে নেত্রকোণা জেলা দেশের অনগ্রসর অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। সেই প্রেক্ষিতে পূর্বধলা উপজেলা একটি পিছিয়ে পরা উপজেলা হিসেবেই বিবেচিত। যদিও অপার সম্ভাবনাময় এই উপজেলার রয়েছে ঈর্ষণীয় অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্য। দেশবরেণ্য অনেক প্রতিথযশা গুণী মানুষ জন্ম নিয়েছেন এই উপজেলায়, আলো ছড়িয়েছেন জাতীয় পরিমন্ডলে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পর্যায় থেকে উপজেলার উন্নয়নে কখনো কখনো দৃশ্যমান কিছু উদ্যোগ দেখা গেলেও এর ধারাবাহিকতা তেমনটা থাকেনি।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও মাঠ প্রশাসনের সাথে কার্যকর ও জোড়ালো সমন্বয় না থাকায় উন্নয়নের ঢেউ খুব বেশি একটা লাগেনি এই উপজেলায়। এগারটি ইউনিয়ন নিয়ে পূর্বধলা উপজেলা বাস্তবিক পক্ষেই রয়ে গেছে দেশের মূল ধারার উন্নয়ন প্রক্রিয়া থেকে অনেকটাই দূরে।
নির্বাহী অফিসার হিসেবে মো. খবিরুল আহসান হয়তবা চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন এই উপজেলার সম্ভাব্য ক্ষেত্রসমূহ, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নজরে নিয়ে শুরুও করেছিলেন নানামাত্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া। তার কার্যক্রমে অবকাঠামো, স্থানীয় সরকার, সরকারি সেবা, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, গণ-গ্রন্থাগার, ক্রীড়াঙ্গন প্রাধান্য পেয়েছে তা স্পষ্টতই বোঝা যায়। এ সকল ক্ষেত্রে দৃশ্যমান বেশকিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করেছিলেন। মো. খবিরুল আহসান একজন সৃষ্টিশীল মানুষেরই প্রতিচ্ছবি। যতার্থভাবেই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পদটিকে তিনি অলংকৃত করেছেন। তবে অনুকূল পরিবেশের অভাব আর সময় স্বল্পতায় তা তিনি উপভোগ করতে পারেননি। কর্মস্থল বদল; পেশাগত কারণে তার জন্য স্বাভাবিক ঘটনা হলেও উপজেলাবাসীর কাছে নিঃসন্দেহে এটি আচমকা এক বিদায় ঘন্টা।
রাজধলা বিল; এতদ অঞ্চলের একটি অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। এটি নিতান্তই একটি জলাধার নয়। রাজধলা বিল কেবল পূর্বধলা কিংবা নেত্রকোণা জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের একটি অন্যতম নিদর্শন। রাজধলা বিলকে ঘিরে রয়েছে অনেক মিথ। পর্যটন পিপাসুরা ক্ষণিকের জন্য হলেও এই বিলটির কাছে ছুটে যান। তবে কতজনকেইবা রাজধলা বিল মমতার বাঁধনে বাঁধতে পেরেছে!
মো. খবিরুল আহসান অনন্য, সত্যিকার অর্থেই তিনি রাজধলা বিলের প্রেমে পরলেন। তাই সাম্প্রতিক সময়ে তিনি এমন একটি উদ্যোগ নিলেন যাতে করে তাকে প্রতিদিনই রাজধলার পাড়ে ছুটে যেতে হতো। বিলের পাড় ঘেঁষে এমন একটি নান্দনিক মুক্তমঞ্চ তৈরি করলেন, যারাই অনাগত দিনে অতিথির আসনে এই মঞ্চে বসবেন তাদেরকে নিঃসন্দেহে বিষয়বস্তু ভুলে গিয়ে বিলের সৌন্দর্য্য অবগাহনে মুগ্ধ হয়ে আনমনা হয়ে তাকিয়ে থাকতে হবে বিলের টলমলে স্বচ্ছ জলের পানে ক্ষণিকের তরে। তিনি মঞ্চের পাশেই নির্মান করলেন একটি শিশুপার্ক। পূর্বধলা উপজেলায় এটিই একমাত্র শিশুপার্ক। সুধীজনের পক্ষ থেকে ইতঃপূর্বে একটি শিশু পার্কের আবেদন থাকলেও এমন আকাঙ্ক্ষা পূরন করতে পারলেন কেবল একজন খবিরুল আহসান। তার সৃষ্টির পাশেই আবেগমিশ্রিত ভালোবাসায় লিখে রাখলেন
পূর্বধলা উপজেলার সার্বিক কল্যাণে মো. খবিরুল আহসান হয়তোবা আরো অনেক কিছুই করতে চেয়েছিলেন, আপন মহিমায় তিনি সাজাতেও পারতেন এই জনপদকে। সেই যোগ্যতা-দক্ষতাও তার রয়েছে। তবে সময় তাকে ততটা সুযোগ দেয়নি। তাই পূর্বধলাবাসীকে থাকতে হবে অন্য একজন খবিরুল আহসানের প্রতিক্ষায়।
পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে দায়িত্ব পালনকালীন মো. খবিরুল আহসান যাদের সান্নিধ্যে এসেছেন, যারা তার কাছ থেকে সেবা নিয়েছেন, যাদের সাথে নানাভাবে তার কর্মসম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে, তার প্রতিটি আচরণে যাদের কল্যাণে প্রকাশ পেয়েছে ব্যাকুলতা, এহেন বিদায়লগ্নে তাদের সকলের আবেগ আপ্লুত চিৎকারে কেবলই ধ্বনিত হচ্ছে
সৈয়দ আরিফুজ্জামান
সম্পাদক