রমজান মাসের পাঁচ বৈশিষ্ট্য

আরবান ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৫, ১১:৪২ দুপুর
_original_1741585358.jpg)
ইবাদতের মাস পবিত্র রমজান। রমজানের ইবাদত আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। অল্প ইবাদতে বেশি প্রতিদান পাওয়া যায় এ মাসে। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, রমজানের নফল ইবাদত অন্য মাসের ফরজ ইবাদতের মতো। আর একটি ফরজ ইবাদত অন্য মাসের সত্তরটি ফরজের সমান। হাদিস শরিফে পবিত্র রমজানের বিশেষ পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা বর্ণিত হয়েছে। যা শেষ নবীর উম্মতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতকে রমজানে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়েছে, যা পূর্ববর্তী কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি ১. রোজাদারের মুখের অনাহারজনিত গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মেশকের চেয়ে অধিক সুঘ্রাণসম্পন্ন। ২. তাদের জন্য ফেরেশতারা (ইফতারের পূর্ব পর্যন্ত) মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে। ৩. আল্লাহ তায়ালা প্রতিদিন জান্নাতকে সুসজ্জিত করে বলেন, অচিরেই আমার নেককার বান্দারা দুনিয়ার কষ্টক্লেশ সহ্য করে তোমার কাছে আসছে। ৪. শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। ৫. রমজান মাসের শেষ রজনীতে তাদের (উম্মতে মুহাম্মদিকে) ক্ষমা করে দেওয়া হয়। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! এ ক্ষমা কি কদরের রাতে করা হয়? তিনি বললেন, না। কোনো শ্রমিককে তার পারিশ্রমিক কাজ শেষ করার পরই দেওয়া হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭৯১৭)
প্রথম বৈশিষ্ট্য : হাদিসের প্রথম বক্তব্য ‘রোজাদারের মুখের অনাহারজনিত গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মেশকের চেয়ে অধিক সুঘ্রাণসম্পন্ন।’ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করতে গিয়ে যে অগোছালো ধূলিমলিন ছন্নছাড়া অবস্থার সৃষ্টি হয়, তা আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। যেমন শহিদের রক্ত। বাস্তবিক অর্থে রক্ত নাপাক হলেও শহিদের রক্ত আল্লাহ তায়ালার কাছে মেশকের মতো সুঘ্রাণযুক্ত। কারণ এ রক্ত প্রবাহিত হয়েছে আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘শহিদ ব্যক্তি কেয়ামত দিবসে এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার ক্ষতস্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। তার রং হবে রক্তের কিন্তু ঘ্রাণ হবে মেশকের’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৮০৩)। তদ্রƒপ হাজিদের ব্যাপারেও হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, তারা যখন আরাফার মাঠে এলোমেলো চুল, ধূলিমাখা অবস্থায় উপস্থিত হয়, তখন আল্লাহ তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ববোধ করেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩৮৫২)।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য : হাদিসের দ্বিতীয় বক্তব্য ‘রোজাদারদের জন্য ফেরেশতারা (ইফতারের পূর্ব পর্যন্ত) মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে।’ ফেরেশতারা আল্লাহ তায়ালার সম্মানিত ও প্রিয় বান্দা। তারা কখনো মহান প্রভুর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয় না। তাদের ভেতর অবাধ্যতার সে সহজাত প্রবৃত্তি নেই। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা (ফেরেশতারা) আল্লাহর কোনো নির্দেশ অমান্য করে না, বরং তাঁর যাবতীয় নির্দেশ পালন করে’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ০৬)। আল্লাহ তায়ালা যেহেতু তাদের রোজাদারের জন্য দোয়া করার অনুমতি দিয়েছেন, সুতরাং তিনি তা কবুলও করবেন, এটাই যুক্তিযুক্ত। তা ছাড়া তারা তো নিষ্পাপ, এ জন্যও তাদের দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
তৃতীয় বৈশিষ্ট্য : হাদিসের তৃতীয় বক্তব্য ‘আল্লাহ তায়ালা প্রতিদিন জান্নাতকে সুসজ্জিত করে বলেন, অচিরেই আমার নেককার বান্দারা দুনিয়ার কষ্টক্লেশ সহ্য করে তোমার কাছে আসছে।’ আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের নেক কাজের প্রতি উৎসাহিত করার জন্যই প্রতিদিন জান্নাতকে সুসজ্জিত করেন। ইহকালে দুঃখ-কষ্ট, যাতনা-ক্লেশ সহ্য করে নেক আমলে লিপ্ত থাকলেই পরকালীন জীবনে চির সফলতা অর্জন করা যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫)।
চতুর্থ বৈশিষ্ট্য : হাদিসের চতুর্থ বক্তব্য ‘শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’ তারা তখন মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দিতে পারে না। ফলে মানুষের জন্য নেক আমলে লিপ্ত হওয়া এবং পাপকাজ পরিহার করা সহজ হয়। তবে সারা বছর বিভিন্ন পাপকাজে লিপ্ত থাকার কারণে মানুষ নিজের সহজাত কুপ্রবৃত্তির দাসে পরিণত হয়। ফলে রমজানেও এ কুপ্রবৃত্তির ধোঁকায় পড়ে কেউ কেউ বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো, দ্রুততম সময়ে তওবা করে নেওয়া।
পঞ্চম বৈশিষ্ট্য : হাদিসের পঞ্চম বক্তব্য ‘রমজান মাসের শেষ রজনীতে তাদের (উম্মতে মুহাম্মদিকে) ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’
সারা মাস যারা রমজানের সিয়াম সাধনা পালন করবে, তারাবির নামাজ আদায় করবে, অন্যান্য ফরজ ও নফল ইবাদতে লিপ্ত থাকবে, সব ধরনের পাপাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখবে, কোনো কারণে পাপকাজ সংঘটিত হয়ে গেলে দ্রুততম সময়ে তওবা করে নেবে, আল্লাহ তায়ালা রমজানের শেষ রজনীতে তাদের ক্ষমা করে দেবেন।
উল্লিখিত পাঁচটি বৈশিষ্ট্য হলো উম্মতে মুহাম্মদির প্রতি মহান আল্লাহর বিশেষ দয়া ও ইহসান। এ ছাড়া অন্য কোনো উম্মতের জন্য এ বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের রমজানের পরিপূর্ণ হক আদায় করার তওফিক
দান করুন।
মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা