বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১
শিরোনাম

কলমাকান্দায় বারসিক এর আয়োজনে "প্রাণ প্রকৃতি মেলা ২০২৫" অনুষ্ঠিত


  ফখরুল আলম খসরু, কলমাকান্দা প্রতিনিধি

প্রকাশ :  ১১ মার্চ ২০২৫, ০১:৩২ দুপুর

নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার ভেলুয়াতলী গ্রামে পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থার প্রচারে বারসিক (বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ)-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো “প্রাণ প্রকৃতি মেলা ২০২৫”। এ মেলায় কৃষক, পরিবেশবাদী, সমমনা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় জনগণের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ ছিল লক্ষ্যণীয়। 
 
প্রাণ প্রকৃতি মেলা -২০২৫ উপলক্ষ্যে বারসিক এর প্রোগ্রাম অফিসার গুঞ্জন রেমা এর সঞ্চালনায় ও বহুত্ববাদী সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের আহবায়ক গ্রীপসন চাম্বুগং এর সভাপতিত্বে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন জনাব রিপন সাহা, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, কলমাকান্দা নেত্রকোণা। আরো উপস্থিত ছিলেন বারসিক এর আঞ্চলিক সমন্বয়কারী জনাব অহিদুর রহমান, সহযোগি সমন্বয়কারী জনাব শংকর ম্রং, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জনাব হারুন অর রশিদ, নাজিরপুর ০১ নং ওয়ার্ডের সদস্য জনাব নূরে আলম, ডিএসকে প্রতিনিধি জনাব ফাহিম আহমেদ, বহুত্¦বাদী সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের সদস্য সচিব জনাব মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক, ৪টি ইউনিয়নের ১৩০ জন  কৃষক কৃষানী প্রভৃতি। 
 
“প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হলে টেকসই কৃষি ও পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনকে গুরুত্ব দিতে হবে। স্থানীয় কৃষি ও ঐতিহ্যবাহী চাষাবাদ পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারি।”
 
মেলার বিশেষ আয়োজন-স্থানীয় বৈচিত্র্যময় বীজের প্রদর্শনী স্টল, এ স্টলের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিল- কৃষকদের মধ্যে স্থানীয় ও হারিয়ে যাওয়া বীজের গুরুত্ব তুলে ধরা। রাসায়নিক মুক্ত ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করা। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো স্থানীয় কৃষি প্রযুক্তি তুলে ধরা।
 
কুটির শিল্প প্রদর্শনী স্টল এ স্টল মূলত যে উদ্দেশ্যে করা তা হল- স্থানীয় কারুশিল্প ও ঐতিহ্যবাহী শিল্পের প্রচার ও বিপণনের সুযোগ তৈরি করা। নারীদের আত্মকর্মসংস্থানে উৎসাহিত করা ও তাদের তৈরি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করা। পরিবেশবান্ধব ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণের ব্যবহারকে জনপ্রিয় করা ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে কুটির শিল্পের ভূমিকা তুলে ধরা।
 
হাজলের স্টল- এ স্টলটি উদ্দেশ্য ছিল-স্থানীয়ভাবে প্রচলিত হাজল পদ্ধতিতে ডিম ফোটানোর প্রক্রিয়া তুলে ধরা। প্রাকৃতিক উপায়ে হাঁস-মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের টেকসই পদ্ধতি জনসমক্ষে আনা। বিদ্যুৎ বা আধুনিক ইনকিউবেটর ছাড়াই কৌশলগত উপায়ে ডিম ফোটানোর গুরুত্ব তুলে ধরা। গ্রামীণ কৃষকদের কম খরচে হাঁস-মুরগি পালন সম্পর্কে সচেতন করা। হাঁস-মুরগির সহজ ও টেকসই বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে স্বল্প পরিসরে প্রাণিসম্পদ বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করা। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে হাজল পদ্ধতির ভূমিকা বোঝানো।
 
অচাষকৃত খাদ্যে স্টল এ স্টলের মাধ্যমে যে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে যেমন- গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তায় অচাষকৃত উদ্ভিদের ভূমিকা তুলে ধরা। রাসায়নিক মুক্ত, পুষ্টিকর ও স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য খাদ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবেশবান্ধব ও কম খরচে টেকসই খাদ্য উৎপাদনের বিকল্প উপায় প্রদর্শন করা। হারিয়ে যাওয়া বা কম পরিচিত খাদ্যের পুনঃপ্রচলন ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করা।
 
স্টলগুলি সার্বিক বিবেচনা করে ৪টি স্টলটিকেই নির্বাচিত করে প্রত্যেক স্টলের তত্ত¡বধানকারী ৮ জনকে ৮টি স্থানীয় জাতের মুরগী পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়।
 
স্থাানীয়দের অভিমত গ্রামের কৃষক ও উদ্যোক্তারা এই মেলাকে অত্যন্ত  কার্যকর একটি উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন।  মো: তাজউদ্দিন বলেন,  "আমাদের স্থানীয় বীজ ও চাষাবাদ পদ্ধতির গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন করে জানতে পেরেছি। রাসায়নিক মুক্ত চাষাবাদ কীভাবে করা যায়, সে সম্পর্কেও দারুণ ধারণা পেয়েছি।" উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার বলেন, আজকের মেলায় আমরা স্থানীয় বৈচিত্র্যময় বীজের প্রদর্শনী স্টল, কুটির শিল্প প্রদর্শনী, হাজল পদ্ধতিতে ডিম ফোটানো এবং অচাষকৃত খাদ্যের স্টল দেখতে পাচ্ছি, যা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারের দিকনির্দেশনা দেয়। এই উদ্যোগগুলো শুধু পরিবেশ সংরক্ষণই নয়, বরং গ্রামীণ অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এই মেলার মাধ্যমে আমরা প্রকৃতির সঙ্গে টেকসই সহাবস্থান গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ হবো। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে এক সুন্দর ভারসাম্য সৃষ্টি হবে।
 
প্রকৃতি ও প্রাণের সংযোগকে কেন্দ্র করে আয়োজিত “প্রাণ প্রকৃতি মেলা ২০২৫” শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, বরং এটি পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির এক অনন্য উদ্যোগ। স্থানীয় কৃষি, জীববৈচিত্র্য, কুটির শিল্প এবং টেকসই জীবনধারার গুরুত্ব তুলে ধরে এই মেলা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে আত্মনির্ভরশীল হতে অনুপ্রাণিত করেছে।
 
স্থানীয় বীজ সংরক্ষণ, অচাষকৃত খাদ্যের ব্যবহার, হাজল পদ্ধতিতে প্রাণিসম্পদ উৎপাদন এবং কুটির শিল্পের প্রসারের মতো বিষয়গুলো আলোচনায় এনে এই মেলা টেকসই কৃষি ও পরিবেশবান্ধব জীবনধারার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত