বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১
শিরোনাম

যেভাবে রোজা ধৈর্যশীল বানায়


  আরবান ডেস্ক

প্রকাশ :  ০৬ মার্চ ২০২৫, ১১:১২ দুপুর

রোজা এমন এক ইবাদত, যাতে কোনো লৌকিকতা নেই; লোক দেখানোর অবকাশ নেই। রোজা হলো ধৈর্যশীলদের জন্য উৎকৃষ্ট পরীক্ষা। মুমিন বান্দা দিনভর উপোস থাকে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। আল্লাহর ভয়েই তারা পানাহার থেকে বিরত থাকে। না হয় পৃথিবীর কোনো শক্তি এমন আছে যে, মানুষকে গোপনে এক ঢোক পানি পান করা থেকে বিরত রাখতে পারে? রোজাদার পিপাসায় কাতর হয়, ওজুর জন্য মুখে পানি নেয়, কিন্তু একটু পানি গলার নিচে নামতে দেয় না। ইফতার সামনে নিয়ে বসে থাকে, সময় হওয়ার আগে ঘ্রাণও নিতে চায় না, কার ভয়ে? কার ভালোবাসায়? একমাত্র আল্লাহর ভয়ে, আল্লাহর ভালোবাসায়।

নির্জন স্থানে কেউ দেখছে না, কিন্তু আল্লাহ দেখছেন। কেউ জানছে না, কিন্তু আল্লাহ জানছেন। স্বাধীন মানুষ তার খাবারের স্বাধীনতা ভোগ করছে না, তার যৌন চাহিদা মেটানোর স্বাধীনতা ভোগ করছে না, কেবল আল্লাহর ভয়ে। এটি রোজাদারের নৈতিক ও তাকওয়ার শক্তি। রোজাদারের এই যে বোধ, এই যে চেতনা, এটি অন্য কোনো ইবাদতে দেখা যায় না। এর জন্য রোজাদারকে ধৈর্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে হয়। ধৈর্যের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। আর 

এ জন্যই নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রমজান ধৈর্যের মাস, আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত।’ (বায়হাকি)

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৪)। ধৈর্য না থাকার কারণে মানুষ অনাকাক্সিক্ষত বহু সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়ে। অনেক সময় কারণে-অকারণে ধৈর্যচ্যুতি ঘটে, মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। রোজা রেখে ধৈর্যের বাঁধ যেন না ভাঙে, সে জন্য নবী করিম (সা.) আমাদের সতর্ক করেছেন। 

তিনি বলেন, ‘রোজা হচ্ছে ঢালস্বরূপ। যখন তোমাদের কেউ রোজা থাকে, সে যেন অশ্লীল কথাবার্তা না বলে এবং মূর্খের মতো কাজ না করে। কেউ যদি তাকে গালি দেয় বা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়, তা হলে সে যেন বলে, আমি রোজাদার, আমি রোজাদার।’ (বুখারি : ১৯০৪; মুসলিম : ১১৫১)

ধৈর্যধারণ মানব চরিত্রের উত্তম গুণাবলির অন্যতম। পবিত্র কুরআনে স্থানে স্থানে মহান আল্লাহ নিজেকে ধৈর্যশীল ও পরম সহিষ্ণু হিসেবে পরিচয় প্রদান করেছেন। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তো সম্যক প্রজ্ঞাময়, পরম সহনশীল’ (সুরা হজ : ৫৯)। 
 
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘আমি তো তাকে পেলাম ধৈর্যশীল। কত উত্তম বান্দা সে! সে ছিল আমার অভিমুখী।’ (সুরা ছোয়াদ : ৪৪)

ধৈর্যের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মহাকালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়’ (সুরা আসর : ১-৩)। এই সুরার শেষে আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যকে সাফল্যের নিয়ামক রূপে বর্ণনা করেছেন। 
 
তিনি বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো এবং সুসম্পর্ক তৈরি করো, আল্লাহকে ভয় করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা আলে ইমরান : ২০০)

আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যধারণকারীর সঙ্গে থাকেন; আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যার সঙ্গে থাকবেন তার সফলতা অবধারিত। কুরআনে তিনি বলেন, ‘হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন’ (সুরা বাকারা : ১৫৩)। 

তাই আসুন, জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমরা ধৈর্য ধারণ করি। বিশেষত, রমজানে কারও সঙ্গে রাগারাগি না করি। কেউ অন্যায় করলে, ভুল করলে বা আমার সামান্য ক্ষতি করলেও ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করি। ঝগড়া-বিবাদে না জড়াই। বিশেষত পরিবারের লোকদের সঙ্গে, অধীনস্থ কর্মীদের সঙ্গে কিংবা চারপাশের পরিচিত মানুষদের সঙ্গে হৃদত্যাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করি।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত