আজ ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনা মুক্ত দিবস :রক্তস্নাত সংগ্রামে মুক্ত হয়েছিল এক শহর
মো: আরিফুল ইসলাম
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫৭ দুপুর
_original_1765259822.jpg)
আজ ৯ ডিসেম্বর, নেত্রকোনা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাক-হানাদার বাহিনীর কবল থেকে শত্রুমুক্ত হয় নেত্রকোনা। ইতিহাসের এই দিনটি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তাজা রক্তে রঞ্জিত এক পবিত্র, গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের স্মারক।
ভোররাতের সম্মুখসমর ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর ভোরে জেলা শহরের চারদিক থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। উত্তরের দিক থেকে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটির দিকে আক্রমণ শুরু হলে দক্ষিণে নেত্রকোনা শহরের কৃষি ফার্মে (বিএডিসি) ঘটে ভয়াবহ যুদ্ধ। অবশেষে পাক-হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা।
পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের আগমুহূর্তে বীরদের আত্মদান
বিজয়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যখন এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই পাক বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন তিন সাহসী যোদ্ধা-
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার (আবু খাঁ)
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সিদ্দিক আহম্মেদ (সাত্তার)
তাদের আত্মত্যাগই নেত্রকোনার মুক্তির ইতিহাসকে আরো আলো করে রেখেছে।
বধ্যভূমি ও স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের দাবি
নয় মাসের যুদ্ধে নেত্রকোনায় ৫৯ জনের অধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ শত শত নিরস্ত্র মানুষ পাক বাহিনীর হাতে নিহত হন; সম্ভ্রম হারান অগণিত মা-বোন।
জেলার বিভিন্ন বধ্যভূমি আজও স্মৃতিস্তম্ভহীন। মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় মানুষের দাবি এই সব ঐতিহাসিক স্থানে স্মৃতিফলক নির্মাণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইতিহাস সংরক্ষণ করা হোক।
১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল পাক বাহিনী নেত্রকোনায় প্রবেশ করে। সেদিনই ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. মিহির সেন, তার ভাই সিদ্ধার্থ সেন ও পরিবারের কর্মচারী করুণাকে।
পরদিন রাজাকারদের সহায়তায় নিহত হন মিহির সেনের বাবা হেম সেন ও কাকা অখিল সেন। এরপর পুরো জেলাজুড়ে শুরু হয় হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ। গ্রামের পর গ্রাম ছারখার করে দেয় হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা।
টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ—নির্যাতনের সাক্ষী
নেত্রকোনার সাতপাই এলাকার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (পূর্বনাম—ভোকেশনাল) পাক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করত। এ প্রতিষ্ঠানটি আজও অত্যাচার-নির্যাতনের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু এখানেও এখনো কোনো স্মৃতিফলক বা বধ্যভূমির চিহ্ন নেই।
অপরদিকে নেত্রকোনা হানাদারমুক্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই, ৮ ডিসেম্বর, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আহম্মেদ নূরীর নেতৃত্বে বারহাট্টায় পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। এটি নেত্রকোনার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য গৌরবময় ঘটনা।
নেত্রকোনা মুক্ত দিবস শুধু একটি তারিখ নয়,এটি এক জেলার ত্যাগ, যন্ত্রণা ও প্রতিরোধের স্মৃতি। বীরদের রক্ত, শহীদদের আত্মদান, নির্যাতিত মানুষের কান্না এবং স্বপ্নময় স্বাধীনতার পথে যাঁরা এগিয়ে গিয়েছিলেন তাদের প্রতিটি পদক্ষেপই আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি।







