হামিদুলের কপাল খারাপ

সিদ্দিক আলম দয়াল
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৫, ০১:৪৩ দুপুর

টিসিবির পণ্য পেতে হাহাকার অবস্থা শুরু হয়েছে গাইবান্ধার মানুষের মধ্যে। এ অবস্থায় পরিস্থিতির কারণে হামিদুল ইসলাম তেল ডাল ও চিনির টাকা নিয়ে দুই দিন লাইনে দাড়িয়েও পায়নি টিসিবির স্লিপ। স্লিপ সংগ্রহ করতে গিয়ে হুরোহরির মধ্যে পড়ে গতকাল তিনি পিছিয়ে পড়েন। কাল না পেয়ে আবার আজও এসেছেন সরকার পাড়ার টিসিবির বিক্রয় কেন্দ্রের লাইনে। কিন্তু হাজারও নারী পুরুষের ভীড়ের কারনে আজও তার ভাগ্যে স্লিপ জোটেনি।
গাইবান্ধার ২৭ টি পয়েন্টে বুধবার থেকে দেয়া হচ্ছে টিসিবির পণ্য। সরকারী হিসাবে বলা হয় গাইবান্ধা পৌর এলাকার ১০ হাজার ৮শ নারী পুরুষ টিসিবির পণ্য কেনার সুযোগ পাবেন। কিনতু পণ্য কেনার আগ্রহী মানুষের তুলনায় পণ্যের সংখ্যা খুব কম বলে অভিযোগ করেন পণ্য কিনতে আসা হামিদা বেগম ।
রোজা রেখে আজ আবার টিসিবির পণ্য বিতরন করা হচ্ছে শুনে সাইকেল নিয়ে হাজির স্বল্প আয়ের মানুষ হামিদুল ইসলাম। সাড়ে ৪শ টাকা যোগার করে হাজির হন ডিসি অফিসের চত্তরে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়েও স্লিপ ও টিসিবির স্লিপ পায়নি। বিকেলে খালি হাতে ফিরে যান বাড়িতে। পানি মুখে দিয়ে ইফতার সেরে স্ত্রী আখি তারাকে তেল, ডাল, খেজুর কিনতে না পারার গল্প হামিদুল ইসলামের বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় গ্রামে। জমিজমা নেই , নেই বাড়ি ভিটে। মুক্তিযোদ্ধা পিতার বীর নিবাসের একটি ঘরে সংসার তার।
আকাশ, হানিফা, আরিফা, ইদুল, শাকিল সহ ৫ ছেলে মেয়ে ও স্ত্রী আখিতারা কে নিয়ে থাকেন সেখানে। তার বাবা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সেই সুত্রে বীর নিবাসে বাস করেন খেয়ে না খেয়ে। শরীর স্বাস্থ্য আর কাজে কর্মে ভালো বলে হামিদুল গাইবান্ধার আহম্মদ উদ্দিন শাহ শিশু নিকেতনের পরিচ্ছন্নকর্মীর কাজ করেন। মাসিক ১৭ হাজার টাকা বেতনে তার ৭ জনের সংসার চলে টেনে টুনে। পবিত্র রমজান মাসে খরচ বেশি। তাই সংসারে এই টাকার খরচ দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারেন না। চাল কিনলে ডাল হয়না, তেল কিনলে অন্য কিছু হয়না। টানাটানির সংসারে রমজানের শুরু থেকেই পরিবারের ৫ জন মিলে রোজা রেখেছেন। কিন্তু ইফতারে ভালো মন্দ খেতে পাারেনি। তাই যদি টিসিবির পণ্য পাওয়া যায় তাই স্ত্রী আখি তারাকে বলে টাকা যোগার করে আবারও আজ সকালে এসেছেন টিসিবির পণ্য বিতরন কেন্দ্রের চত্তরে। এসে দেখেন অনেক নারী পুরুষ ভীড় করছেন সেখানে। বেলা ১২ টার দিকে পৌর সভার লোকজন এসে বিতরন শুরু করেন শ্লিপ। শ্লিপ নিয়ে নারী পুরুষের টানাটানি ও হুরোহুরি এবং গোলমাল শুরু হয়ে যায় সরকারপাড়ার টিসিবির বিক্রয় কেন্দ্রের চত্তরে। এতো হুরোহুরির মধ্যে টিকতে না পেরে পৌর কর্মচারীরা শ্লিপ দেয়া বন্ধ করে দেন। চারদিকে শ শ নারী পুরুষের ভীড়, অগোছালো লাইনে দাড়িয়ে থাকেন মানুষ। কিন্তু তখনও টিসিবির পণ্য বিক্রির ট্রাক পৌছেনি। বেলা সোয়া ১টায় আসেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হেদায়েতুল ইসলাম। তিনি মাইক দিয়ে সবাই পণ্য পাবেন এবং যারা শ্লিপ পেয়েছেন তাদেরকে সামনে লাইনে দাড়াতে বলেন। লাইনে থাকলেও লাইনের সর্বশেষে জায়গা হয় হামিদুল ইসলামের। তিনি আফসোস করে বলেন, জানিনা ভাই দুদিন ধরে পণ্য কিনতে আসি কিন্তু আজও আমার ভাগ্যে টিসিবির পণ্য পাবো কিনা জানি না। তিনি বলেন আমার কপাল খারাপ। ঠেলাঠেলির জন্য আবারও আমি লাইনের পেছনে পড়ে গেলাম।