রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২
শিরোনাম

কার ভাগ্যে জুটবে দলীয় টিকেট? পূর্বধলায় বিএনপির মনোনয়নের আশায় প্রচারে আছেন ছয় প্রার্থী


  মো: জায়েজুল ইসলাম

প্রকাশ :  ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৫৬ দুপুর

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায়-১৬০, নেত্রকোণা-৫ (পূর্বধলা) আসনে প্রচারনায় ব্যস্ত রয়েছেন দলীয় প্রার্থীগণ। 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে এই আসনে নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে ছয় জন প্রার্থী তাদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন প্রচারণায় এগিয়ে থাকলেও দলীয় মনোনয়নের আশা ছাড়ছেন না বাকীরাও। 

প্রচারনার অংশ হিসেবে কর্মীসভা, উঠান বৈঠক, শোভাযাত্রা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মতবিনিময়, দলীয় কর্মসুচী বাস্তবায়ন, সুশীল সমাজের সাথে মতবিনিময় সভা করে যাচ্ছেন নিয়মিত। শেষ পর্যন্ত কে পাবেন সোনার হরিণ; সেই দলীয় টিকেট তা নিয়েই মাঠ পর্যায়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা।  

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপির প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। খুব শিগগিরই আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে মাঠে কাজ করার জন্য ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়া হবে। 

তিনি আরও জানান, ‘বিএনপি একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক, উদারপন্থি রাজনৈতিক দল। প্রত্যেকটি আসনে আমাদের একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। অনেক আসনে ১০ থেকে ১২ জনের মতো প্রার্থী আছে। এখন আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করছি। খুব শিগগির আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে মাঠে কাজ করার জন্য ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেব। তবে সেটি অফিশিয়াল হবে তফশিল ঘোষণার পরে।’

দলের এমন ঘোষনায় নেত্রকোণার পূর্বধলা আসনের বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমুল পর্যায় পর্যন্ত তাদের তৎপরতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন। 

এই আসনে বিএনপি থেকে যাদের নাম জোরে-শোরে শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন আলহাজ্ব আবু তাহের তালুকদার। ছাত্র জীবন থেকেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে জড়িত এই নেতা। ছাত্র রাজনীতিতে তিনি এক সময় নেত্রকোণা সরকারি কলেজের ভিপি ছিলেন। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের পদও তিনি অলংকৃত করেছেন। পরবর্তীতে তিনি বিএনপির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে নেত্রকোণা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন ৩বার। সম্প্রতি ঘোষিত পূর্বধলা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন তিনি। দীর্ঘদিন যাবত রাজনীতি করে দলের গুরুত্বপুর্ণ পদ অলংকৃত করলেও এমপি হওয়ার স্বাদ পূর্ণ হয়নি ডাকসাইটে এই নেতার। আলহাজ্ব আবু তাহের তালুকদার একাধিক সময়ে মনোনয়ন চাইলেও ২০১৮ সালে একবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। সে নির্বাচনে দিনের ভোট রাতেই কেটে ফেলার কারনে তার এমপি হওয়ার সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যায় বলে তার নেতা কর্মীদের ধারনা। এবার তিনি মনোনয়ন পাওয়ার আশায় আট-ঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন। সে আশায় মাঠ পর্যায়ে ব্যপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তার অনুসারীরা বলছেন, দলের একজন পরিক্ষীত প্রবীণ রাজনীতিবিদ হিসেবে এবার তিনি মনোনয়ন পেতে পারেন।   

উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক, এক সময়ের তুখোড় ছাত্র নেতা আলহাজ্ব মো. বাবুল আলম তালুকদার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমান আহবায়ক কমিটির আগের কমিটিতেও তিনি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ছিলেন। তার আগে উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। দলকে সুসংগঠিত রাখার লক্ষে ইউনিয়ন পর্যায়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিনিয়ত জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন সদা হাস্যউজ্জল এই নেতা। বিগত সময়ে আওয়ামী বিরোধী আন্দোলনেও তার ভুমিকা ছিল চোখে পড়ার মত। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে তিনি আগামী নির্বাচনে দলীয় গ্রীন সিগনাল পেতে পারেন বলে মনে করছেন তার অনুসারীরা ।  

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে উদীয়মান তরুণ নেতা হিসেবে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করছেন উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব, এএসএম শহীদুল্লাহ ইমরান। ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে তার দুরদর্শিতার প্রমাণ দিচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ছাত্র জীবনে তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিভিন্ন মেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্নপদ অলংকৃত করেন। তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতির মত গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে নেত্রকোণা জেলা বিএনপির সদস্য ও সবশেষে বর্তমান পূর্বধলা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব নির্বাচিত হয়ে সবার নজর কাড়েন তরুণ এই নেতা। বিগত সময়ে আন্দোলন সংগ্রামেও রাজপথে বেশ সক্রিয় ছিলেন এএসএম শহীদুল্লাহ ইমরান। বর্তমানে দলীয় মনোনয়নের আশায় তিনি মাঠ পর্যায়ে ব্যপক কাজ করে যাচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ের ব্যাপক তৎপরতা, ব্যক্তি ইমেজ ও কেন্দ্রের শক্ত লবিংকে কাজে লাগিয়ে তিনি দলের মনোনয়নের গ্রীণ সিগনাল পেয়ে চমক দেখাতে পারেন বলে তার অনুরাসারীরা মাঠ পর্যায়ে সরব রয়েছে। 

উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল আলম রানা মরহুম পিতা, সাবেক সফল সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ডাঃ মোহাম্মদ আলী ও তার মা বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রাবেয়া আলীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে দলীয় মনোনয়নের গ্রিণ সিগনালের আশায় মাঠ পর্যায়ে ব্যপক কাজ করে যাচ্ছেন। বাবার দেখানো পথ ধরেই পূর্বধলার উন্নয়ন তথা মানুষের সেবায় কাজ করার জন্য লন্ডন থেকে দেশে ফিরে এসেছেন সহজ সরল সাদা মনের এই প্রার্থী । সেই লক্ষে প্রতিনিয়ত তিনি দলীয় কর্মসুচী পালনসহ জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিবারের ঐতিহ্য ও নিজ তৎপরতাকে কাজে লাগিয়ে আগামী নির্বাচনে তিনি মনোনয়নের গ্রীন সিগনাল পেতে পারেন বলে মনে করছেন তার অনুসারীরা। তাছাড়া ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল আলম রানা’র পরিবর্তে তার মাতা বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রাবেয়া আলীর নামও রয়েছে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায়। 

এছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়নের আশায় আরো যারা প্রচারনায় রয়েছেন তাদের একজন হলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ খান। আর অপরজন হলেন ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান সোহেল। মওদুদ অহমেদ খান যুক্তরাজ্য প্রবাসী। যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন এবং সেই সাথে সেখানে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন। তিনি মাঝে মধ্যেই যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ছুটে এসে নিজের প্রার্থীতার কথা জানান দিচ্ছেন। আর ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান সোহেল নিজের প্রার্থীতার কথা জানান দিয়ে উপজেলায় প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক পদে আছেন। এছাড়া জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের  কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য ও কো-অর্ডিনেটর হিসেবে আছেন। ছাত্রদলের রাজনীতিতেও তিনি ছিলেন সক্রিয় নেতা। ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন তরুণ এই নেতা।

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবে অতীতের যে কোন নির্বাচনের চেয়ে কঠিন নির্বাচন। আর এমনটাই আভাস দিচ্ছেন দলের হাই কমান্ডের নেতৃবৃন্দ। তাই পূর্বধলা আসনে বতর্মানে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিএনপির কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলেও ধানের শীষের প্রশ্নে মনোনয়ন প্রার্থীর পক্ষেই তারা কাজ করে যাবেন বলে আশ্বস্থ করছেন। আর দলের নিবেদিত প্রাণ সাধারণ কর্মীদের প্রত্যাশা, দল যেন সৎ, যোগ্য, ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকেই তাদের প্রতিনিধির জন্য যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দেয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত