রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২
শিরোনাম

শেরপুরে পাখির বাসায় ব্যতিক্রমী দুর্গামণ্ডপ !


  রফিক মজিদ, শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ :  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:২২ বিকাল

প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ, পাখি সুরক্ষা ও পাখির আবাসস্থল সংরক্ষণের বার্তা নিয়ে ব্যতিক্রমী দুর্গামণ্ডপ সাজিয়েছে শেরপুরের স্থানীয় মার্চেন্ট ক্লাব। বাবুই পাখির বাসার আদলে করা এ দুর্গামণ্ডপ শেরপুরের অন্যান্য মণ্ডপগুলোর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ এনেছে। 

পরিত্যক্ত বাক্স আর কার্টনের কাগজ, নারকেলের ছোবড়া, পাট, কাঠের গুড়াসহ বিভিন্ন ধরনের পরিবেশবান্ধব উপাদানে তৈরি প্রতিমায় এবার শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন করতে যাচ্ছে অর্ধশত বছরের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) ষষ্ঠীর মাধ্যমে পূজা অর্চনার কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই পুণ্যার্থী ও সাধারণ মানুষ পূজামণ্ডপটি এক নজর দেখার জন্য কালিমন্দিরে ভীড় করছেন। সবাই সময়োপযোগী থিম ও পরিবেশবান্ধব উপাদানে তৈরি দুর্গামন্ডপের জন্য মার্চেন্ট ক্লাব কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ষষ্ঠীপূজা থেকে এ পূজামণ্ডপে উপচেপড়া ভীড় হবে বলে মনে করছেন আয়োজকরা।

প্রতিবছরই ভিন্ন থিম ও বৈচিত্র্যের ওপর ভিত্তি করে শহরের নয়ানী বাজার-কালিরবাজার-তিনানী বাজারের ব্যবসায়ীদের নিয়ে গড়া মার্চেন্ট ক্লাব শারদীয় দুর্গ্যােৎসব উদযাপন করে আসছে। মার্চেন্ট ক্লাবের সার্বজনীন দুর্গাপূজাটি এবার ৫২ বছর অতিক্রম করছে। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবারের পুজামন্ডপটি পাখি সুরক্ষা এবং পাখির আবাসস্থল সংরক্ষণ ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে। মণ্ডপে প্রবেশের পথে পাখির পালকের মোটিফ তৈরি করা হয়েছে। নারকেলের ছোবড়া দিয়ে তৈরি বাবুই পাখির বাসার আদলের ভেতরে দক্ষিণ ভারতের স্টাইলে নির্মিত দেবী দুর্গাসহ মন্ডপের প্রতিমাগুলোকে বসানো হয়েছে।

মণ্ডপের তিন পাশেই পরিত্যক্ত বাক্স, কাঠের গুড়া আর কার্টনের কাগজে তৈরি করা হয়েছে অনেকগুলো পাখির বাসা। সেখানে কাগজে তৈরি করা হয়েছে বাসায় আশ্রয় নেওয়া এবং উড়ে বেড়ানো শত শত পাখির মোটিফ। যে কেউ একনজর দেখলেই হৃদয়ে আনমনে দোলা দিয়ে ওঠবে পাখির কিচির-মিচির শব্দের মিতালী। পূজামণ্ডপকে ঘিরে বর্ণিল আলোকসজ্জা রাত্রিকালীন বিনোদনে পরিণত হয়েছে।

জানা যায়, স্থানীয় গৌড় মালাকার ও নিতাই মালাকার নামে প্রতিমা কারিগর তরুণ দুই ভাই মার্চেন্ট ক্লাবের এ ব্যতিক্রমী দুর্গামণ্ডপটি তৈরি করেছেন। মণ্ডপের সকল প্রতিমা এবং সাজসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে পরিত্যক্ত বাক্স, কার্টন বাক্সের কাগজ, নারকেলের ছোবড়া, পাট, কাঠের গুড়াসহ বিভিন্ন ধরনের পরিবেশবান্ধব উপাদান। মণ্ডপের সাজসজ্জায় পাখির পালকে দেবীপক্ষের আগমনের বিষয়টির প্রতীকি অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।

শিল্পী নিতাই মালাকার বলেন, প্রকৃতি হলো আমাদের ‘মা’। মা-তো স্বয়ং দেবী। তাইতো এবার আমরা দুর্গাপূজার থিমটা করেছি পাখি সংরক্ষণ। মানে প্রকৃতি সংরক্ষণ। বনায়ন বাঁচাও, পাখি সংরক্ষণ করো। এর ফলে প্রকৃতির যে ভারসাম্য সেটা যেন রক্ষা হয়।

তিনি জানান, এ দুর্গামণ্ডপটি তৈরি করতে আমাদের প্রায় তিন সপ্তাহ সময় লেগেছে এবং খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার মতো। প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে যা পাওয়া যায়, আমরা সেসব উপাদান ব্যবহার করেছি।

মার্চেন্ট ক্লাবের সদস্য তরুণ ব্যবসায়ী রবীন্দ্র নাথ বসাক বলেনন, পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। নগর সভ্যতার কারণে পাখির আবাসস্থল আমরা নিজেরাই নষ্ট করে ফেলেছি। পাখির আবাসস্থল রক্ষার জন্য আমার-আপনার সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের এই পাখিকে, পাখির আবাসস্থলকে, প্রকৃতিকে রক্ষা করার থিম নিয়ে আমরা এবার আমাদের পূজামন্ডপকে সাজিয়েছি। যেন ধর্মীয় পূণ্যকর্মের সাথে সাথে সকলেই প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতন হয়।

শেরপুর বার্ড কনজারভেশন সোসাইটির সভাপতি সভাপতি সুজয় মালাকার বলেন, মার্চেন্ট ক্লাব বরাবরই তাদের পূজামণ্ডপটি আকর্ষণীয় ও থিমেটিক করতে চেষ্টা করে। তবে এবার পাখি ও পাখির আবাসস্থল সুরক্ষা এবং প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তা দিয়ে পূজামণ্ড তৈরি করায় ভিন্নমাত্রা পেয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত