কাজ করার সময় পিঠের ব্যথা প্রতিরোধে কি করবেন?

আরবান ডেস্ক
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ০১:৩২ দুপুর

অফিসে বসে কাজ করার সময় পিঠের ব্যথা অনেকের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা। বিশেষ করে যারা দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন, তাদের জন্য এটি আরও বেশি সমস্যা তৈরি করতে পারে। পিঠে ব্যথা মূলত মাংসপেশি, রক্তনালী ও হাড়ের ওপর অতিরিক্ত চাপের কারণে হয়। নিয়মিত খারাপ আসনে বসা, সঠিক ভঙ্গিমা না থাকা, দীর্ঘ সময় এক জায়গায় থাকা এবং শরীরচর্চার অভাব পিঠের ব্যথার প্রধান কারণ। তবে কিছু সহজ নিয়ম ও অভ্যাস মেনে চললে এই ব্যথা অনেকটাই কমানো সম্ভব।
প্রথমে, সঠিক আসনের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অফিসে এমন একটি চেয়ারে বসা উচিত যা পিঠের নিচের অংশকে যথাযথ সমর্থন দেয়। চেয়ারের পিঠ এমনভাবে থাকা দরকার যাতে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বাঁক ঠিক থাকে। পা সম্পূর্ণভাবে মাটিতে রাখা উচিত। যদি পা মাটিতে না পৌঁছায়, তবে ছোট একটি স্টুল বা ফুট রেস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া, কম্পিউটারের মনিটর চোখের লেভেলে রাখা উচিত যাতে মাথা এবং ঘাড়ে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।
দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে না থাকা খুব জরুরি। প্রতি এক ঘণ্টায় অন্তত পাঁচ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করা উচিত। হালকা স্ট্রেচিং বা পা-হাঁটু ঘুরানো মতো ব্যায়াম করলে পেশি শিথিল হয় এবং রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে। অফিসের মধ্যেই ছোট ছোট বিরতি নিলে পিঠের চাপ কমে। এছাড়া, যদি সম্ভব হয়, দাঁড়িয়ে কাজ করার ব্যবস্থা করা যায়। আজকাল অনেক অফিসে স্ট্যান্ডিং ডেস্ক ব্যবহার করা হয়, যা পিঠের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করে।
পেশি শক্ত রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা প্রয়োজন। বিশেষ করে পিঠ, কাঁধ এবং পেটের পেশি শক্ত হলে মেরুদণ্ড ভালোভাবে সাপোর্ট পায়। ঘরে বা জিমে হালকা ব্যায়াম, যোগাসন বা পিলাটেস করলে পিঠের ব্যথা অনেকটাই কমানো যায়। এমনকি অফিসেই চেয়ারে বসে কিছু সহজ স্ট্রেচিং করা সম্ভব। পেছনের পেশি ও কোমরের পেশি শিথিল রাখলে দীর্ঘ সময় বসেও কম ব্যথা অনুভূত হয়।
খাবারের দিকে লক্ষ্য রাখা ও ওজন নিয়ন্ত্রণেও পিঠের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। অতিরিক্ত ওজন থাকলে পিঠের উপর চাপ বেড়ে যায়। তাই সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। প্রোটিন, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার পেশি ও হাড়ের জন্য উপকারি। জল পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করলে পেশি ও ডিস্কের কার্যক্ষমতা ভালো থাকে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খারাপ ভঙ্গি এড়িয়ে চলা। অনেক সময় আমরা অবচেতনভাবে কাঁধ ঝুলিয়ে বা হেলানো অবস্থায় বসি। এই অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে পিঠের ব্যথা সৃষ্টি করে। চেষ্টা করা উচিত সব সময় পিঠ সরল রাখা, কাঁধ পেছনে এবং মাথা সামনের দিকে না ঝোলানো। কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ডেস্ক ফোন এমনভাবে রাখলে ঘাড় ও পিঠে চাপ কম হয়।
পিঠে ব্যথা শুরু হলে সময়মতো বিরতি নেওয়া দরকার। ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কখনও কখনও পেশি শিথিলকরণ ও ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক আসন, ভঙ্গি, স্ট্রেচিং এবং হালকা ব্যায়াম মেনে চললেই পিঠের ব্যথা কমানো সম্ভব।
সুতরাং, অফিসে বসে কাজ করার সময় পিঠের ব্যথা প্রতিরোধ করতে সঠিক আসন নির্বাচন, সঠিক ভঙ্গি রাখা, মাঝেমাঝে হাঁটা বা স্ট্রেচিং করা, পেশি শক্ত রাখার জন্য ব্যায়াম এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ খুবই জরুরি। এই অভ্যাসগুলি দীর্ঘ সময় ধরে মানলে পিঠ সুস্থ থাকে এবং কাজের উপর প্রভাব কমে। পিঠের ব্যথা প্রতিরোধ শুধু স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, কর্মদক্ষতা ও মনোযোগও বজায় রাখতে সাহায্য করে।