শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১
শিরোনাম

মদন উপজেলা নির্বাচন অফিসের উদ্যোগে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচী


  শহীদুল ইসলাম, মদন প্রতিনিধি

প্রকাশ :  ১৪ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৯ দুপুর

জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার দাবিতে সারাদেশের ন্যায় নেত্রকোণার মদন উপজেলায়ও মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। 
 
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স এসোসিয়েশনের ব্যানারে প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী এই কর্মসূচী পালিত হয়।
 
এসময় মদন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তা অন্ত কাপুর বিপুল, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পারভীন আক্তার,ডাটা এন্ট্রি অপারেটর বিল্লাল উদ্দিন,ডাটা এন্ট্রি অপারেটর সাখাওয়াত হো‌সেন, স্ক‌্যা‌নিং এন্ড ইকুইপম‌্যান্ট মেইনটেন‌্যান্স অপা‌রেটর লিমন মিয়া বক্তব্য রাখেন।
 
এসময় ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তা অন্ত কাপুর বিপুল তার বক্তব্যে বলেন,আমরা মনে করি,জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকাই সংবিধানসম্মত,নিরাপদ ও কার্যকর ব্যবস্থা। আমরা সকল অংশীজনের সহযোগিতা কামনিা করছি, যাতে ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালিত হতে পারে এবং জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকে।
 
কর্মসূচী পালন শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০০৭-০৮ সালে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতায় একটি নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে ওঠে 8 কোটি ১০ লক্ষ নাগরিকের ডেমোগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক তথ্য সম্বলিত এক সুবিশাল ভোটার ডেটাবেইজ যা পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য নজির। সর্বশেষ প্রকাশিক চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুসারে এই ডাটাবেজে প্রায় সাড় ১২ কোটি নাগরিকের তথ্য রয়েছে। ইউএনডিপির সমীক্ষা অনুসারে ভোটারদের এই সংগৃহীত ডাটা ৯৯.৭ শতাংশ সঠিক মর্মে আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি লাভ রয়েছে। ভোটার তালিকার এই তথ্যভান্ডার থেকেই উপজাত হিসেবে নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র  এনআইডি প্রদান করা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে এ সেবা নির্বাচন কমিশনের আওতা থেকে স্থানান্তরের বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা চলছে।
 
উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন নিম্নলিখিত বিষয়গুলো ষ্পষ্ট করতে চায়;
 
০১. সাংবিধানিক ম্যান্ডেট: সংবিধান-এর ১১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণের তত্ত্বাবধান, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত। ভোটার তালিকার তথ্যভান্ডার একটি সংবিধানিক দলিল, যা কারও কাছে হস্তান্তর করার সুযোগ নেই।
০২.  ভোটার তালিকা প্রণয়ন প্রক্রিয়াঃ উচ্চ আদালতের আদেশ অনুসারে, ভোটার তালিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি একটি সংবিধানসম্মত ও সুরক্ষিত প্রক্রিয়া, যা এনআইডি কার্যক্রমের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
০৩. জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকাঃ জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকার উপজার। প্রকৃতপক্ষে, জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আলাদা কোন তথ্যভান্ডার নেই, এটি শুধুমাত্র ভোটার তালিকা উদ্ভুত।
০৪. ডাটাবেজের নিরাপত্তা ও সম্ভাব্য ঝুকিঁঃ এনআইডি সেবা অন্য সংস্থার অধীনে পেলে data duplication ও database manipulation এর আশংকা দেখা দিতে পারে। এতে বিদ্যমান cheak & balance ব্যবস্থা বিনষ্ট হওয়ার ঝুকিঁ থাকবে।
০৫. গোপনীতা ও তথ্য সুরক্ষাঃ নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত ও গোপনীয় তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আমানত হিসেবে সংরক্ষিত। সাংবিধানিকভাবে কমিশন এই তথ্য অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারেনা। এটি নাগরিকদের তথ্য সুরষ্কার প্রশ্নেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
০৬. জনগণের বিপুল অর্থের সাশ্রয়ঃ জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনে থাকায় এবং কমিশনের একই জনবল দ্বারা এই কার্যক্রম সম্পাদনের ফলে দেশ ও সরকারের এটি একটি সাশ্রয়ী সেবায় পরিণত হয়েছে। আলাদা কোন কর্তৃপক্ষ তৈরি করা হলে জনবল, স্থাপনা ও অন্যান্য অবকাঠামো তৈরিতে জনগণের বিপুল অর্থের অপচয় হবে যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা।
 
০৭. ভোটার নিবন্ধনে নেতিবাচক প্রভাবঃ জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশন হতে অন্যত্র স্থানান্তর করা হলে  শুধুমাত্র ভোটার হওয়ার জন্য জনগণের আগ্রহ ও উদ্দীপনায় নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে যা ভবিষ্যতে  নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। উপরন্তু নির্বাচন কমিশন নিজস্ব উদ্ভাবনী কার্যক্রমের স্বীকৃতি হারালে নতুন কোন উদ্ভাবনে (innovation) প্রতিষ্ঠানিকভাবে নিরুৎসাহিত হবে।
 
০৮. ভোটার তালিকার শুদ্ধতা নিয়ে সন্দেহঃ নির্বাচন কমিশন থেকে এনআইডি কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়া হলে  ভোটার তালিকার নির্ভুলতা নিয়ে রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সংশয় তৈরি হতে পারে। ফলে গণতান্ত্রিক  প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা হুমকির মুখে পড়ছে। 
 
০৯. রাজনৈতিক দলগুলোর অভিমতঃ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ২০২৩ সালের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন বাতিল করে এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের অধীনে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছে। এতে স্পষ্ট যে, নির্বাচন কমিশনের অধীনে এনআইডি কার্যক্রম পরিচালিত হওয়াই সর্বজনস্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত