ওলি-আউলিয়ার পরিচয় ও মর্যাদা

আরবান ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৫, ১০:৫৪ দুপুর
_original_1747025662.jpg)
যারা আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ বা আত্মনিবেদিতপ্রাণ, তারা হলেন আল্লাহর বন্ধু। পবিত্র কুরআনে তাদের ‘ওলি’ ও ‘আউলিয়া’ শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের মানুষের নফস সবসময় আল্লাহর স্মরণে জাগ্রত থাকে। তারা পার্থিব জগতের আকর্ষণ থেকে মুক্ত। সর্বদা কামনা ও প্রচেষ্টা থাকে আখেরাতের এবং আল্লাহকে পাওয়ার।
এ ধরনের মানুষকে আল্লাহ ‘বন্ধু’ সম্বোধন করে বলেছেন-‘জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। যারা ঈমান এনেছে এবং যারা তাকওয়ার পথে চলেছে তাদের জন্য দুনিয়া এবং আখেরাতের জীবনে সুসংবাদ। আল্লাহর কথায় কোনো পরিবর্তন নেই। এটিই মহাসফলতা।’ (সুরা ইউনুস : ৬২-৬৪)
একবার আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর দরবারে এক যুবক উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার পবিত্র চেহারা তো এখানে অহরহ দেখছি, কিন্তু কেয়ামতের দিন কী অবস্থা হবে? আপনি তো তখন থাকবেন অত্যন্ত উচ্চ অবস্থানে! রাসুল (সা.) যুবকটিকে বললেন, ইনশাআল্লাহ তুমি জান্নাতে আমার সঙ্গে থাকবে। রাসুল (সা.)-এর আজাদকৃত দাস ছিলেন হজরত সাওবান (রা.)। তিনি রাসুল (সা.)-কে অধিক ভালোবাসতেন। রাসুলের সামান্য সময়ের চোখের আড়াল তার সহ্য হতো না।
একদিন রাসুল (সা.) দেখলেন, হজরত সাওবান বিষণ ও চিন্তিত। রাসুল (সা.) হজরত সাওবান (রা.)-কে দেখে বললেন, তুমি বিমর্ষ কেন? হজরত সাওবান বললেন, আমার কোনো দুঃখ নেই। কিন্তু আপনার বিরহ ও সামান্য সময়ের আড়াল আমার কাছে অসহনীয়। আখেরাতে আপনি আপনার নবী-রাসুল ভ্রাতৃদের সঙ্গে অবস্থান করবেন অনেক উঁচু তলার বেহেশতে। তখনকার বিরহভাবনাই আমাকে বিমর্ষ করেছে। তখন তো আপনাকে সচরাচর দেখতে পাব না।
ঠিক ওই মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত নাজিল করে দিলেন ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করবে তারা ওইসব মানুষ, যাদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত অবতীর্ণ করছেন। তারা হলেন- নবী, সিদ্দিক, শহিদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হলো উত্তম।’ (সুরা নিসা : ৬৯-৭০)
আয়াতের ভাষ্য মতে, এই চার শ্রেণি আল্লাহর প্রিয়জন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি একবার রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কেয়ামত কখন সংঘটিত হবে? রাসুল (সা.) বললেন, তুমি কেয়ামতের জন্য কী প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ। আমি বললাম, আমি আল্লাহর রাসুলকে ভালোবাসি, এ ছাড়া অন্য কিছু তো নেই!
রাসুল (সা.) বললেন, তবে তুমি তাদেরই সঙ্গী হবে যাদের তুমি ভালোবাসো’ (তাফসিরে মাজহারি : ৩/১৬৯)। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক মানুষের হাশর তার সঙ্গে হবে যাকে সে ভালোবাসে। যে যাকে ভালোবাসে তাকে তার সঙ্গী ও তার অনুগামী হিসেবে গণ্য করা হবে। এমনকি হাশর, কেয়ামত, পুলসিরাত, জান্নাত বা জাহান্নাম পর্যন্ত সে তারই সঙ্গী হবে। সুতরাং কেউ যদি ভালো হতে চায়, ভালো ঠিকানা পেতে চায়, আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়, সে যেন আল্লাহর পথের পথিকদের, নেক্কারদের, ওলি, আলেম, মুত্তাকিদের সাহচর্য গ্রহণ করে এবং তাদের ভালোবাসা অর্জনের চেষ্টা করে।’ (রিয়াদুস সালেহিন : ১/৩৭১)
কেয়ামতের পর সবার খুবই কঠিন ও ভয়াবহ অবস্থা হবে। হাশরের ময়দানে কার কী অবস্থা হবে কেউ বলতে পারবে না। আল্লাহ তায়ালা যদি আমাদের হিসাব নেওয়া শুরু করেন তা হলে কারোই কোনো উপায় থাকবে না। কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী পুণ্যবানদের তথা ওলি-আউলিয়াদের সোহবতে যদি আমরা দুনিয়ার জীবন অতিবাহিত করতে পারি, তা হলে পরকালের আজাব-গজব আমাদের থেকে দূরে থাকবে, এতটুকু আশা রাখতে পারি।