শিশুদের অসহিষ্ণুতা ও অভিভাবকদের ভাবনা

এ কে এম আজিজুর রহমান
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৫, ০১:৩৯ দুপুর
_original_1741851447.jpg)
নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার দুইটি ঐতিহ্যবাহী স্কুল পূর্বধলা জগৎমণি সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও জালশুকা কুমুদগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কাউট শিশুদের মধ্যে সংঘটিত সংঘাতের ঘটনা এবং পরবর্তীতে এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট এক শিক্ষক নেতৃত্বের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। এ ধরনের ঘটনা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং সামাজিকভাবে বিভেদ ও হানাহানির সৃষ্টি করতে পারে।
উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এই ঘটনার প্রতিকার এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। নিম্নে এই ঘটনার প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য কিছু কার্যকর সুপারিশ উপস্থাপন করা হলো:
১. শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংলাপ ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি: স্কুলে নিয়মিত সংলাপ, ওয়ার্কশপ ও আলোচনা সেশনের আয়োজন করা। যাতে শিক্ষার্থীরা একে অপরের অনুভূতি, মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহানুভূতি ও সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলার জন্য সামাজিক ও মানসিক দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালু করা। সংঘাত নিরসনের জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভূমিকা শেখানো।
২. শান্তি ও সংঘাত নিরসন প্রশিক্ষণ:
স্কাউটসহ সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে শান্তি, সহিষ্ণুতা ও সংঘাত নিরসনের শিক্ষা প্রদান করা। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সমস্যা সমাধানের কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তারা যেকোনো বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবিলা করতে পারে। স্কাউট কার্যক্রমে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা সংবলিত বিশেষ সেশন অন্তর্ভুক্ত করা।
৩. অভিভাবকদের সম্পৃক্ততা ও সচেতনতা বৃদ্ধি: অভিভাবকদের সাথে নিয়মিত আলোচনা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে তাদের সচেতন করা এবং শিশুদের আচরণগত উন্নতিতে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে অবহিত করা। অভিভাবকদের স্কুল কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করে তাদের সমর্থন আদায় করা, যাতে তারা শিশুদের শান্তিপূর্ণ আচরণ ও সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারেন।
অভিভাবকদের জন্য ওয়ার্কশপ বা সেমিনারের আয়োজন করা, যেখানে শিশুদের মানসিক বিকাশ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
৪. পরিষ্কার ও দৃঢ় নীতিমালা প্রণয়ন: স্কুল পর্যায়ে সংঘাত ও মারামারি প্রতিরোধের জন্য পরিষ্কার ও দৃঢ় নীতিমালা প্রণয়ন করা। নীতিমালা অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে এই নীতিমালা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। নিয়মিত মনিটরিং ও মূল্যায়নের মাধ্যমে নীতিমালার প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
৫. মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা প্রদান:
যেসব শিক্ষার্থী এই ঘটনায় জড়িত ছিল বা প্রভাবিত হয়েছে, তাদের জন্য মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিং ও সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা। স্কুলে কাউন্সেলর নিয়োগ বা স্থানীয় মনোবিজ্ঞানীদের সহায়তায় নিয়মিত কাউন্সেলিং সেশন চালু করা।
৬. সামাজিক সম্প্রীতি ও ঐক্য গড়ে তোলা: স্কুল ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্য গড়ে তোলার জন্য যৌথ কার্যক্রম আয়োজন করা। সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি, যেমন শান্তি র্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলার আয়োজন করা, যাতে শিশুদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সহযোগিতার মনোভাব গড়ে উঠে।
৭. শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি:
শিক্ষকদের সংঘাত নিরসন, শান্তি শিক্ষা ও শিশু মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা। শিক্ষকদের দায়িত্ববোধ ও নেতৃত্বের গুণাবলি উন্নত করার জন্য ওয়ার্কশপ ও সেমিনারের আয়োজন করা।
৮. স্কাউট কার্যক্রমের পুনর্গঠন: স্কাউট কার্যক্রমে শান্তি, সহযোগিতা ও দলগত কাজের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া। স্কাউটসহ অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রমে শিশুদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি ও সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তোলার জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম চালু করা।
এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করলে শিশুদের মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি ও সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় একটি সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
- এ কে এম আজিজুর রহমান
আন্তর্জাতিক শিশু উন্নয়ন কর্মী,
ও সদস্য, পূর্বধলা প্রেস ক্লাব