মুরগীর মাংস ৯০ টাকা কেজি দরে কিনে পূর্বধলায় ১২০ টাকা দরে বিক্রি! প্রশ্ন মরা না জীবিত?

মো: জায়েজুল ইসলাম
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৬:৫০ বিকাল
_original_1752055722.jpg)
৯০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে ১২০টাকায় দেদারসে বিক্রি করছে এক কেজি মুরগীর মাংস। আর সস্তা দাম পেয়ে এসব মাংস কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে এক শ্রেণির ক্রেতা। এসব মাংশ জীবিত মুরগীর না মরা মুরগীর এমন কৌতুহল বিভিন্ন মহলে থাকলেও কেউ আর তলিয়ে দেখছে না। নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার হোগলা বাজারে সপ্তাহে দুই হাটের দিন এমন সস্তা দামে মুরগীর মাংস বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনিক কোন কার্যকরী তদারকি না থাকায় জনমনে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
গতকাল মঙ্গলবার ৯ জুলাই হোগলা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দুইজন বিক্রেতা দুটি পৃথক জায়গায় পোল্ট্রি মুরগীর মাংস ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। মাংসের মধ্যে রানের অংশ, গাড়া গিলা, কলিজা, মেরুদন্ড, চামড়া, পা আলাদাভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তবে রানের মধ্যে মাংশের পরিমান একটু কম। আর বাকী সব ঠিকঠাক আছে। বিক্রেতা জয়নাল উদ্দিন জানান, তিনি প্রায় দেড় বছর যাবত এসব মাংস হোগলাবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে আসছেন। আর এসব মাংস ময়মনসিংহ সদরের বলাশপুরের মুক্তিযোদ্ধা পল্লী থেকে ৯০টাকা কেজি দরে ক্রয় করে আনেন। আর ১২০টাকা কেজি দরে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে থাকেন।
এক কেজি মুরগী নাড়িভুড়ি ও পাকনাসহ বর্তমানে ১৫০টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। সেখানে ভুড়ি ও পাকনার অংশ বাদ দিলে কাটা চিলা অবস্থায় মাংশের দাম দাঁড়ায় প্রায় ১৮০টাকা কেজি। সেখানে ৯০টাকা দরে কিভাবে কেনে? এমন প্রশ্নের জবাবে দুই বিক্রেতা জয়নাল উদ্দিন ও নাজমুল হাসান জানান, আমরা যেখানে কিনি সেখানের বিক্রেতারা জানিয়েছেন জবাইকৃত মুরগী হাড্ডি ব্যতিত মাংসগুলি হোটেলে ও হাসপাতালে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ওইসব মুরগী জবাই করতে দেখেছেন কিনা জানতে চাইলে তারা জানান আমরা দেখেনি তবে তারা ৫ কেজি করে প্যাকেট আমাদের বুঝিয়ে দেন। এছাড়া রেখে দেওয়া মাংশ, হোটেলে, হাসপাতালে এবং পাঙ্গাস মাছের খাদ্য হিসেবে বিক্রি করা হয় এমন বক্তব্যেও অনেকে সন্দেহ পোষন করেন। তারা প্রতি বাজারে সেখান প্রায় ১০০কেজির মত মাংস বিক্রি করে থাকেন।
ম প্রকাশ না করার শর্তে জটিয়াবর গ্রামের এক ক্রেতা জানান, আমি একদিন ১কেজি নিয়েছিলাম। তারপর খেয়ে কোন প্রকার স্বাদ পাইনি। তাছাড়া মনে সন্দেহ সন্দেহ লেগেছে। পরে আর কোনদিন কিনেনি। তিনি আরও জানান, বাজারে মুরগীর কেজি ২০০টাকা উপরে ছিল তখনও তারা ১২০টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করেছেন।
বলাশপুরের মুক্তিযোদ্ধা পল্লীর আড়তের এক বিক্রেতার “সিটি চিকেন” নামের প্রতিষ্ঠানের মেমো থেকে প্রাপ্ত মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে আল আমিন নামে এক বিক্রেতা জানান, তারা এসব পণ্য, নারিশ, সিটি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন কোম্পানীর কাছ থেকে বাই প্রোডাক্ট হিসেবে ক্রয় করে থাকেন। যেখানে শুধু হাড়, বুক, পায়া, চামড়া কলিজা, গাড় গিলা ইত্যাদি অংশগুলো থাকে। আর মাংশগুলো ওইসব কোম্পানী বিদেশে রপ্তানীসহ ও ফাইভ স্টার হোটেলে বিক্রি করে থাকেন বলে জানান।
উপজেলা স্যানিটারী ইনস্পেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক (অ: দা:) মো: আবুল হাশিম জানান, এ বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে খোঁজ নিতে ইতিপূর্বে দুইবার হোগলা বাজারে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। সামনে আবার সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: এম.এম আব্দুল আউয়াল জানান, ৯০টাকা কেজি দরে মুরগীর মাংশ বিক্রির বিষয়টি কোনমতেই বোধগম্য হয় না। হাড্ডি ছাড়া শুধু আলাদা মাংস বিক্রির বিষয়টি সম্পর্কেও আবগত নন। তিনি এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।