সিপিডির সংলাপ: পোশাক খাতে ১৫ লাখ দক্ষ শ্রমিকের অভাব
আরবান ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৬ দুপুর
দেশের পোশাক খাতে ১৫ লাখ দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। যার ফলে পোশাক খাত থেকে অর্ডার অন্য দেশে বেশি চলে যাচ্ছে। একটা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট খুলে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে এমন সংকটে পোশাক খাত পড়বে না বলে জানানো হয়।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে বৃত্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা, কিশোরী ও যুবাদের কাজের সুযোগ ও কর্মব্যবস্থা বিষয়ক সংলাপে এ কথা জানানো হয়। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এ সংলাপের আয়োজন করা হয়। সংলাপে পিছিয়ে পড়া জেলা কিশোরগঞ্জের শ্রমবাজার নিয়ে একটি জরিপ তুলে ধরা হয়।
এ সময় জানানো হয়, ১৮ থেকে ২৬ বছর বয়সিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইদের সঙ্গে যোগাযোগ করানো হলে হয়তোবা কাজের তেমন একটা সংকট হবে না। এ ছাড়া শ্রম আইনে তাদের দক্ষতা অনুযায়ী বেতন দিলে ভবিষ্যতে আরও দক্ষ জনবল বাড়বে বলে সভায় মন্তব্য করা হয়।
সংলাপে বেকার সমস্যা ও বকেয়া বেতন শ্রমিক অসন্তোষের বড় কারণ বলে জানিয়েছেন শ্রম অধিকার সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, শ্রমিককে ভালো কাজের জন্য তৈরি করা প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। এ জন্য শ্রমিককে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। শুধু স্কিল দিয়েই শেষ করা কাজ নয়, জেলা পর্যায়ে কর্মসংস্থান মডেল তৈরি করার নীতি গ্রহণ করা যেতে পারে।
চাকরি হারানো শ্রমিকদের স্থানীয় দক্ষতা গ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বেশিরভাগ কারখানা অটোমেশনের কারণে চাকরি হারিয়েছেন শ্রমিকরা। বেকার সমস্যা ও বকেয়া বেতন শ্রমিক অসন্তোষের বড় কারণ।
সংলাপে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় কর্মমুখী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সময় এসে গেছে। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শ্রমের বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা বাড়াতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ ও ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। আর এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থানে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম অধিকার কমিশনকে উদ্যোগ নিতে বিলম্ব করা ঠিক হবে না। যতটা সম্ভব নারী ও যুবকদের কর্মংসংস্থান বাড়াতে শিক্ষাক্রমে কর্মমুখী শিক্ষায় সংযোজন করতে হবে।
খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, নানামুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে জেলা পর্যায়ে কিশোরী ও তরুণীদের জন্য চাকরির বাজার অনেক চ্যালেঞ্জিং। যে কারণে শহুরে নারীদের চেয়ে গ্রামীণ নারীরা পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু সেই বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
হাওর অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জেলা কিশোরগঞ্জের শ্রমবাজার নিয়ে একটি জরিপ তুলে ধরে খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমের আওতা বাড়াতে হবে। নারীদের কর্মসংস্থান বাড়াতে ফ্রি ট্রেনিং, উপজেলা লেভেলে ইনসেনটিভের ব্যবস্থা করা এবং কৃষি ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকাগুলোতে পেইড ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তো ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উদাসীনতা রয়েছে। তার যদি ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কৃপণতা দেখায় তবে একাডেমিক কোর্স শেষ বা প্রশিক্ষণ শেষে বাস্তব অভিজ্ঞতা আসবে কোথায় থেকে। অভিজ্ঞতা তো ক্লাসে অর্জন করা যায় না। সে জন্য শিল্প গ্রুপগুলোর উচিত যেসব যুবক এ কিশোর একাডেমিক শিক্ষা শেষে ইন্টার্নশিপ করতে আগ্রহী, তাদের সেই সুযোগ নিশ্চিত করা।
নারীর উন্নয়ন এবং পিছিয়ে পড়া গ্রামাঞ্চল নারীদের এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম অধিকার কমিশনকে নারীদের কর্মসংস্থানে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূরীকরণের তাগিদ দেন সিপিডির এই গবেষণা পরিচালক। তিনি আরও বলেন, নারীদের নিয়ে নানা কুসংস্কার রয়েছে। রয়েছে নানা বাধা। এসব বাধা দূর না হলে দেশের কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন উভয় বাধার মুখোমুখি হবে। কেননা নানামুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে জেলা পর্যায়ে কিশোরী ও তরুণীদের জন্য চাকরির বাজার অনেক চ্যালেঞ্জিং। যে কারণে শহুরে নারীদের চেয়ে গ্রামীণ নারীরা পিছিয়ে রয়েছে।
খন্দকার মোয়াজ্জেম কিশোরগঞ্জ জেলার শ্রমবাজার নিয়ে একটি জরিপ তুলে ধরে বলেন, প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এসব দূর করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। নারীদের কর্মসংস্থান বাড়াতে ফ্রি ট্রেনিং, উপজেলা লেভেলে ইনসেনটিভের ব্যবস্থা করা এবং কৃষি ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকাগুলোতে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করতে হবে। এ সময় কিছু সম্মানী বা যেভাবেই হোক বেতনটা পরিশোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতায় বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যুব উন্নয়ন অধিদফতর, মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদফতর, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা পরিষদ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) আওতায় শিক্ষিত-স্বল্পশিক্ষিত যুব নারী-পুরুষদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। আবার শিক্ষার মান হালনাগাদকরণ, বাজার চাহিদা অনুযায়ী উপযোগী কোর্স চালু করা, পাঠদান মান, পরিবীক্ষণ, ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এখনও অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। এ ছাড়াও কারিগরি শিক্ষার প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও এ ক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে সুপারিশগুলো হলো-সব উপজেলায় চাকরি সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে রোল মডেল এবং ক্যারিয়ার কাউন্সেলরদের সঙ্গে কর্মশালার আয়োজন করা। ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং সারা দেশে রোল মডেলদের কর্মশালার ব্যবস্থা করা। তরুণ মহিলাদের জন্য ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং ব্যবসায়িক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করতে হবে। চাকরির জন্য জীবনবৃত্তান্ত লেখা, সাক্ষাৎকারের দক্ষতা এবং তরুণ মহিলাদের জন্য চাকরির আবেদনে সহায়তা প্রদানকারী একটি ক্যারিয়ার কেন্দ্র স্থাপন করা। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকার এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাজারের চাহিদার সঙ্গে সারিবদ্ধ করার জন্য মাল্টি স্টেকহোল্ডার ফোরাম গঠন করা। সবশেষে যুব মহিলাদের নিয়োগ বা চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ প্রদানকারী ব্যবসাগুলোর জন্য বিভিন্ন উপজেলায় প্রণোদনা (ট্যাক্স, ভর্তুকি) প্রদানের ব্যবস্থা করা।