“রাজস্ব আদায় বাড়াতে আমরা মামলাগুলো নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিচ্ছি"
আরবান ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪১ দুপুর
এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “রাজস্ব আদায় বাড়াতে আমরা মামলাগুলো নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিচ্ছি। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে জুলাই ও আগস্টে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে।”
সব ফাঁকফোকর বন্ধ করে রাজস্ব আদায় বাড়াতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপের মুখে রয়েছে এনবিআর। আইএমএফের কাছে ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজস্ব আদায় ঘাটতি ছিল প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। এ সময় লক্ষ্যমাত্রা ৫৭ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে আদায় হয়েছে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শ্লথ হয়ে পড়েছে এবং আমদানি হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে কমে গেছে রাজস্ব আদায়ও। এসব সমাধানে এনবিআর আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক-সংক্রান্ত ২৭ হাজারের বেশি মামলার নিষ্পত্তির কাজ করছে; যেগুলোর পরিমাণ কমপক্ষে ৩৯ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “টাকার এ অংক কম নয়। রাজস্বসংক্রান্ত মামলাগুলোর সংখ্যা আদালতে প্রতিনিয়ত বাড়ার কারণে এই অঙ্ক প্রতিদিনই বাড়ছে।”
সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। আপিল ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে সরকারি কোষাগারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
বৈঠকে অংশ নেওয়া এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, “এসব ক্ষেত্রে আটকে থাকা রাজস্ব আদায়ে অগ্রাধিকার দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনবিআর চেয়ারম্যান আদালতে মামলাজট কমাতে সরকারের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, “হাইকোর্টে একটি পৃথক বেঞ্চ এনবিআর-সংক্রান্ত মামলা নিয়ে কাজ করে।”
ভ্যাট ও ট্যাক্স-সংক্রান্ত মামলা পরিচালনায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) ব্যবস্থার সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “তারা ভালো কাজ করছে।”
এদিকে, ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি মিশন ২৪-৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফর করে। তারা সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সংস্কার অগ্রাধিকারের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়ের ফলাফল নিয়ে অসন্তুষ্ট আইএমএফ। সফরকারী প্রতিনিধি দল হ্রাসের কারণ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। এখন পর্যন্ত মঞ্জুর করা কর ছাড়ের বিষয়ে বিশদ জানতে চেয়েছিলেন তারা।
আগারগাঁওয়ে এনবিআর সদর দপ্তরে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান ও সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক শেষে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) রাজস্ব ঘাটতি ছিল ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা নিয়ে আইএমএফ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এনবিআরকে একটি নতুন রাজস্ব আদায় পরিকল্পনা প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কী পরিমাণ শুল্ক-কর মওকুফ করা হয়েছে সে সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে। তারা এই মওকুফকে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার সুপারিশ করেন। এছাড়া স্বয়ংক্রিয়করণ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার উপর জোর দিয়ে, এই ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদানের প্রস্তাবও দিয়েছেন।
আইএমএফ রাজস্ব খাতের সংস্কারের বিষয়ে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি কৌশলপত্র প্রণয়নের অনুরোধ করেছে এবং পরিকল্পনাটির উন্নয়নে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে।
আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশকে, এরই মধ্যে এ ঋণের তিনটি কিস্তি ছাড় করা হয়েছে। আরও ৩০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
রাজস্ব আদায় বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।