দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার আমাদের মাঝে আর নেই

মো: আরিফুল ইসলাম
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০৭:২৫ বিকাল

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আজ পৌনে তিনটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই গুণীজন। তিনি প্রায় দুই আড়াই মাস যাবত বার্ধক্য জনিত কারণে নানান সমস্যায় ভুগছিলেন।
গত তিনমাস আগেও তার একটি অস্ত্রোপচার করেছিলেন ঢাকায়। গত ০৮ আগস্ট আবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়।
তাঁর চলে যাওয়াতে ভক্ত অনুরাগীরা বলছেন, বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে উনার মরদেহ নেত্রকোনায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
পরে নেত্রকোণা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাত আটটায় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নেত্রকোনা মহাশ্মশানে শেষ কৃতি সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
পরিচিতি ও জন্মজীবনঃ
অধ্যাপক যতীন সরকার (জন্ম: ১৮ আগস্ট ১৯৩৬, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দপাড়া গ্রামে) ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, চিন্তাবিদ ও সমাজকর্মী ।
শিক্ষা ও অধ্যাপনা জীবনঃ
প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি আইএ সম্পন্ন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. (১৯৬৩) পাস করেন । তিনি ১৯৬৪ সালে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং ২০০২ সালে অবসরগ্রহণ করেন ।
সাহিত্য ও চিন্তাশিল্পঃ
অধ্যাপক যতীন সরকার একটি বহুমাত্রিক সাহিত্যিক; তিনি প্রবন্ধ, মননচর্চা, গবেষণা ও শিশুদের জন্য পড়াশোনা ভিত্তিক লেখা রচনা করেছেন ।
তাঁর প্রথম বই “সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা” প্রকাশিত হয় তাঁর পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সে, অর্থাৎ ১৯৮৫ সালে ।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে:
বাংলাদেশের কবিগান, বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সংগ্রাম, মানবমন, মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব, গল্পে গল্পে ব্যাকরণ, পাকিস্তানের জন্ম‑মৃত্যু দর্শন ও পাকিস্তানের ভূত‑দর্শন ।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চল ছাড়িয়ে মফস্বলে বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষের ভাব-বিশ্লেষণে পারদর্শী ছিলেন; তার লেখনির স্বাতন্ত্র্য ছিলেন “কষ্টলেখক” হিসেবে নিজেকে অভিহিত করা—অর্থাৎ, স্বতঃস্ফূর্ততা নয়, বরং কঠোর পরিশ্রম আর গভীর চিন্তাধারার ফসল ।
রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে ভূমিকাঃ
তিনি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছিলেন দুই মেয়াদে। বামপন্থী তাত্ত্বিক ও সাম্যবাদী চিন্তাবিদ হিসেবে তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন; ১৯৭৫-৭৬ সালে সরকারি নিপীড়নে প্রায় ১৮ মাস কারাবাসে থেকেও সক্রিয়তা ধরে রাখেন।
পুরস্কার ও সম্মাননাঃ
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭) ও স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১০) প্রাপ্ত ।
প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কার (পাকিস্তানের জন্ম‑মৃত্যু দর্শনের জন্য), ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দিন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কার ইত্যাদি নানা পুরস্কারে সম্মানিত ।
২০২৪ সালে বীরাঙ্গনা সখিনা সিলভার পেন অ্যাওয়ার্ডও লাভ করেছেন ।
মৃত্যুকালে তিনি এক পুত্র (সুমন সরকার) ও এক কন্যা (সুদীপ্তা সরকার) সহ অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী রেখে গেছেন।
অবসরের পর তিনি নেত্রকোনার সাতপাই এলাকায় নিজের বাসভবন ‘বানপ্রস্থ’ এ বসবাস করতেন; সেই স্থান ছাত্র-সাথীদের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র ছিল ।