আস্থার সংকটে অর্থনীতি : বাংলাদেশ ব্যাংক

আরবান ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৫, ১১:৩৯ দুপুর
_original_1754113135.jpg)
দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের এক বছর হয়ে গেলেও রাজনীতিতে স্বস্তি আসেনি। সংস্কারের মূল বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের সম্ভাবনা এখনো দৃশ্যমান নয়। যেসব খাতে সংস্কার কার্যক্রম চলমান সেগুলো নিয়েও রয়েছে নানান শঙ্কা। সংবিধান, বিচার বিভাগ, আর্থিক খাত, নির্বাচনব্যবস্থা পুনর্গঠন নিয়ে সিরিজ বৈঠক করেও গ্রহণযোগ্য সমাধান এখনো পাওয়া যায়নি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সামাজিক সংকট। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না হওয়ায় জনসাধারণের মধ্যে বেড়েছে অস্বস্তি ও অস্থিরতা। ব্যাংক খাতের দুর্বলতা তো রয়েছেই। ডলারের বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরেছে। টাকার মানও সামান্য বেড়েছে। কিন্তু ব্যাংক খাত থেকে লুট হওয়া অর্থ ফেরত না আসায় রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণ তৈরি হয়েছে। আদায়ের সম্ভাবনা না থাকায় বিপুল পরিমাণ অবলোপন করতে হয়েছে। রাজস্ব খাতেরও উন্নতি হয়নি। গত বছরের লাখো কোটি টাকার ঘাটতি নিয়ে নতুন অর্থবছরের শুরুটাও ইতিবাচক হয়নি। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে আগের সেই অচলাবস্থা বিরাজমান। মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমলেও এখনো অনেক চড়া। খাদ্যপণ্যের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। সামগ্রিক অর্থনীতিতে আস্থার সংকট এখনো কাটেনি। কিছু ক্ষেত্রে এই সংকট আরও বেড়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা করা হলেও সেই সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগকারীদের ওপর। নতুন করে কোনো বিনিয়োগই হচ্ছে না। ঘুরছে না কর্মসংস্থানের চাকা। ব্যবসাবাণিজ্যের মন্দা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। খোদ অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আইএমএফের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ব্যাংক খাত পুনর্গঠনে ৩৫ বিলিয়ন ডলার লাগবে। গত বছরের আগস্টে যখন এই সরকার দায়িত্ব নেয়, তখন দেখা গেছে এরকম অবস্থা বিশ্বে কোথাও নেই। অর্থনৈতিক বিপর্যয় হয়েছে। পতিত সরকার ব্যাংক খাতের ৮০ শতাংশ অর্থ নিয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ব্যাংক খাতে এখন নগদ টাকার ঘাটতি নেই। ঘাটতি হচ্ছে আস্থার। ২০২৫ সালের জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী নিট উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। যা চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ। এই বিপুল অর্থ বাজারে প্রবাহিত হচ্ছে না। তবে কয়েকটি ব্যাংক বেশ সংকটের মধ্যে রয়েছে। এসব ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়মবহির্ভূতভাবে বেরিয়ে গেছে। সংকটের মূল কারণ বিনিয়োগের পরিবেশে অনিশ্চয়তা, ঋণের চাহিদার স্থবিরতা এবং ব্যাংকব্যবস্থার প্রতি অবিশ্বাস। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর নগদ সংকট ও স্বচ্ছতার অভাব গোটা ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ‘পদ্ধতিগত অনাস্থা’ তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের দ্বিধাগ্রস্ত করছে। সঙ্গে আছে উচ্চ সুদের চাপ, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বাজার অস্থিরতা। এসব কারণে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। টাকা থাকলেও মাঠে নামছে না। আটকে আছে হিসাবপত্রে। ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা কিংবা বিনিয়োগকারী কেউই আর নতুন করে পুঁজি বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন না। ফলে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানিও কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পালাবদলের কারণে ধারাবাহিকভাবে গার্মেন্ট, ওষুধসহ বিভিন্ন খাতের অসংখ্য কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ শ্রমিক। এর প্রভাব পড়েছে সামষ্টিক অর্থনীতিতে। এসব কারখানা পুনরায় চালু হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। আবার নতুন কারখানাও স্থাপন করা হচ্ছে না। ফলে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত এক বছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে। বিদেশি উৎস থেকে অর্থায়ন বাড়ায় রিজার্ভও বেড়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বেড়েছে। ফলে ডলারের বাজারে চাপ কমেছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মানও কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে। এটি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। কিন্তু আমদানি বাড়লে এই ধারা হয়তো অব্যাহত থাকবে না। কারণ এখন তো মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি নেতিবাচক। বিনিয়োগও নেই। ফলে অনিশ্চয়তাগুলো কাটিয়ে অর্থনীতিকে একটা ধাক্কা দিতে পারলে পুনরায় সবকিছু চালু হয়ে যাবে। তখন পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। আর এর সবকিছুর জন্য দরকার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারব্যবস্থা বলে তিনি মনে করেন।