উপজেলা পরিষদের নিরাপত্তা প্রাচীর ভেঙ্গে গেইট নির্মাণের উদ্যোগ: জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৫ দুপুর
_original_1745383499.jpg)
ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তারের হস্তক্ষেপে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের দক্ষিণ - পূর্ব কোণের সীমানার নিরাপত্তা প্রাচীর ভেঙ্গে তাঁর নিজ বাস ভবন প্রাঙ্গনে একটি বড় আকারের গেইট নির্মানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তারের শান্তিবাগ মহল্লার বাসভবন প্রাঙ্গনে উপজেলা পরিষদের সিমানা ও নিরাপত্তা প্রাচীর রয়েছে। প্রাচীর ভেঙ্গে তাঁর প্রতিবেশীদের দিয়ে একটি পকেট গেইট নির্মানের জন্য গত ৬ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি আবেদন করেন। এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একটি আবেদন জমা দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা পরিষদ জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে একটি পকেট গেইট নির্মাণ করে দেন। কিন্তু গেইট নির্মাণ হওয়ার পর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তারের হস্তক্ষেপে কয়েকদিন পর একই স্থানে আরেকটি বড় আকারের গেইট নির্মাণ করার জন্য বিভাগীয় কমিশনার ময়মনসিংহ বরাবর একটি আবেদন করেন মহল্লাবাসী কতিপয় ব্যক্তিবর্গ। এতে বলা হয়, এই স্থানে একটি বড় আকারের গেইট নির্মাণ করা হলে এই গেইট দিয়ে এ্যা¤ু^লেন্স, মাইক্রোবাস ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সহজেই চলাচল করতে পারবে। এতে জনগণের কল্যান নিশ্চিত হবে। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২০ এপ্রিল বিকেলে সরেজমিনে তদন্তে আসেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বিপিন বিশ^াস। তিনি সরে জমিনে এসে আবেদনকারীদের ৮/৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একই সাথে উপজেলা পরিষদের সীমানার নিরাপত্তা প্রাচীর ভেঙ্গে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তারের বাসভবন প্রাঙ্গনে বড় আকারের গেইট নির্মানের বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানতে চান।
আবেদনকারীদের মধ্যে শান্তিবাগ মহল্লার অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মতিউর রহমান খান বলেন, একটি গেইট নির্মাণ করা হলে আমাদের সার্বিক ভাবেই সুবিধা হবে। অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ফজলুল হক বলেন, গেইট নির্মাণ হলে আমাদের সকলের জন্যই ভালো। আগে পকেট গেইট নির্মাণের আবেদন দিয়ে এখন আবার ক’দিন পর কেন বড় গেইটের জন্য আবেদন করছেন এ বিষয়ে জানাতে চাইলে তারা কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তবে আবেদনকারীরা জানান, এ বিষয়টি অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তার ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আমাদের কে আবেদন করতে বলেছেন। সে মোতাবেক আমরা আবেদন করেছি এবং তিনিই গেইট নির্মাণের বিষয়ে যোগাযোগ রক্ষা করছেন । সীমানার নিরাপত্তা প্রাচীর ভেঙ্গে বড় আকারের গেইট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতংক উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, এমনিতেই সন্ধ্যার পর উপজেলা পরিষদের মূল গেইট দিয়ে মাদকসেবী ও বিভিন্ন অপরাধী চক্র উপজেলা পরিষদের বাউন্ডারীর ভেতর আশ্রয় নেয়। তারা সিমানা প্রাচীর টপকিয়ে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ড করে থাকেন। গত কয়েক মাস আগে শিল্পকলা একাডেমীর কার্যালয়ে বিদ্যুতের তার কেটে নিয়ে যায়। এতে উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে বসবাসকারীদের নিরাপত্তা বিঘিœত হয়। তারা সীমানার নিরাপত্তা প্রাচীর ভেঙ্গে আর কোন গেইট নির্মাণ না করার দাবী জানান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: হুমায়ূন দিলদার বলেন, একটি উপজেলা পরিষদে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারী দপ্তর রয়েছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রাদিও রয়েছে। তিনি উপজেলা পরিষদের একটি গেইট থাকার পর আর কোন গেইট না রাখার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন। অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, যখন সীমানা ও নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল তখন কোন গেইট রাখা হয়নি। একটি বড় গেইট দিয়েই সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী ও জনগণ চলাফেরা করে। এখন সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে নতুন গেইট নির্মাণ করা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি না। তদন্তে আসা কর্মকর্তা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বিপিন বিশ^াস বলেন, এখানে আমার ব্যক্তিগত কোন মতামত নেই। তদন্তে এসে সকল পক্ষের কথা শুনেছি। সেই মোতাবেক বিভাগীয় কমিশনার বরাবর রিপোর্ট পেশ করবো। পকেট গেইট নির্মাণের কয়েকদিন পর আবার কেন বড় গেইট নির্মাণের জন্য বিভাগীয় কমিশনার বরাবর দাখিল করা আবেদনটি কেন সমর্থন করছেন জানতে চাইলে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তার তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে মন্তব্য করে বলেন, আমার প্রতিবেশী জনগণের সুবিধাতো আমাকে দেখতেই হবে। আমার বাসার আশেপাশের মুরুব্বি যারা কিনা আমার বাবার সঙ্গে চলাফেরা করেছেন। যাদের ¯েœহে আমি বড় হয়েছি। তাদের জন্য কিছু করতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করব। এলাকার মানুষের প্রয়োজনে রাস্তা গেইটের কথা আমি বলতেই পারি। এজন্য আমার বিরুদ্ধে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কথা বলছি তা সম্পন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তারের বাসভবন প্রাঙ্গনে ৬ এপ্রিলের আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি পকেট গেইট নির্মাণ করা হয়েছে। এখন আবার জনগণ দুটি বড় গেইট এবং দুটি ছোট গেইট নির্মাণের জন্য সীমানা ও নিরাপত্তা প্রাচীর ভেঙ্গে করে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। আবেদনগুলি যাচাই বাচাই করা হচ্ছে। পরিষদের সভায় সিদ্ধান্তক্রমে বিবেচনা করা হবে গেইট নিমার্ণ হবে কি হবে না। তবে তিনি এসব গেইট নির্মাণে বাংলাদেশ সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতিরও প্রয়োজন রয়েছে বলেও দাবী করেন।