শেরপুরে চোরাকারবারি 'ডন মাসুদ’ গ্রেফতার, শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

রফিক মজিদ, শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩৪ দুপুর

শেরপুর সীমান্তের বালু কারবারী 'ডন মাসুদ' ওরফে 'বালু মাসুদ' দীর্ঘদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও অবশেষে র্যাবের জালে ধরা পরেছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সেল্টারে কিছুদিন এলাকায় দাপটের সাথে এলাকায় ঘোরাফেরা করে আসছিল। অবশেষে অবৈধ বালু উত্তোলন ও জালজালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজ তৈরি করে বালু পাচার ও সাংবাদিকদের উপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় র্যাব-১৪ গতকাল ৫ এপ্রিল শনিবার রাতে তাকে গ্রেফতার করে ৬ এপ্রিল সকালে শ্রীবরদী থানায় হস্তান্তর করেন। পরে শ্রীবরদী থানা পুলিশ দুইটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখায়।
তার এই গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পরার সাথে সাথে ফুঁসে ওঠে ছাত্র-জনতা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন পরিবেশ ধ্বংসে নেতৃত্বে থাকলেও তার টিকিটিও ছুঁতে পারেনি কেউ। তাই তার শাস্তির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে তারা। মানববন্ধনে শ্রীবরদী উপজেলার অধিবাসী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিষ্টার শাহাদাত হোসেন জিকু নেতৃত্ব দেন। এসময় শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে ব্যারিস্টার শাহাদাত হোসেন জিকু বলেন, আমাদের শ্রীবরদী থানার অন্তর্গত দুইটা নদী সোমেশ্বরী ও ডেওফা। কিন্তু এই উপজেলায় কোন বালু মহাল নেই। সুতরাং এখান থেকে এক ইঞ্চি বালু উত্তোলন করলেও সেটা অবৈধ। বিগত হাসিনা সরকারের পতনের পর বালু খেকোরা পাগলের মতো বালু উত্তোলন শুরু করেছে। প্রায় ২৪ ঘন্টা। সেই এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে ফেলেছে। তাদের বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে। এক আদিবাসী নারী প্রতিবাদ করায় তাকে মেরে আহত করেছে। এছাড়াও পুলিশ প্রশাসন, ইউএনও ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারনে কেউ আইনের আওতায় আসেনা, বালু উত্তোলন বন্ধও হয়না। এই বালু উত্তোলনের সাথে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় উচ্চবিত্ত সরাসরি জড়িত। এই বালু উত্তোলন যেন বন্ধ হয় আমরা এটাই চাই। সেইসাথে বালু মাসুদ সহ যারা বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্ত এলাকা সিংগাবরুণা ইউনিয়নের শয়তান বাজার (মেঘাদল) এলাকায় বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে ওই মাসুদ ও তার দল মুল্যবান লাল বালু উত্তোলন করে আসছে। বিষয়টি অপেন সিক্রেট। এই অবৈধ বালু তোলার ব্যবসা ও মাদক আনা নেওয়ার হটস্পট এখন শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্ত এলাকা। ওই এলাকার শয়তান বাজার মেঘাদল রাবার বাগান এলাকা থেকে বালুর সাথে মাদক পাচার হচ্ছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
৫ আগষ্ট পরবর্তি এখানে বিএনপির পরিচয় দিয়ে এসব অপরাধের মহোৎব করে যাচ্ছে। এছাড়াও বিএনপি থেকে পদত্যাগকারি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু রায়হান বাবুল, মাসুদের ভাই আল আমিন মাসুদের চাচা আকবরসহ আরও ৩০/৩৫জন যুবক এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত।
সরকার শ্রীবরদী উপজেলার দুইটি নদী সোমেশ্বরী ও ডেওফায় কোন বালু মহাল ইজারা দেয়নি। রাত যত গভীর হয় ওদের তৎপরতা বেড়ে যায়। নাম ও পদ ব্যবহারে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তারা অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে। এলাকার মানুষ ওদের কাছে অসহায়। প্রতিদিন অন্তত শতাধিক ট্রাক বালু প্রতি ট্রাক ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চোরাকারবারিদের কাঁচা টাকার গরমে নীরবে আদিবাসি পরিবার গুলোর উপর চলে নির্যাতন। ফলে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
সম্প্রতি স্থানীয় কিছু সাংবাদিক ওই চোরাকারবারি 'ডন মাসুদ' এর অপকর্মের তথ্য তলাশে গেলে মাসুদ স্বয়ং নিজে থেকে তার বাহিনী দিয়ে সাংবাদিকদের গাড়ি ভাঙচুর করে। এসব ঘটনায় মাসুদকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়াও বালু পাচারের অভিযোগে ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকুচা বালু মহালের ইজারাদারের পক্ষে তার বড় ভাই মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ১৫(১) ধারায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মাসুদ অপ্রতিরোধ্যই থেকে যায়। থামেনি তার অবৈধ বালু উত্তোলন। আর ডন মাসুদ বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় বেশ কিছুদিন ঢাকা দিয়ে ঢাকায় অবস্থান করে। তবে সে বিএনপির কেউ নয় বলে জানিয়েছেন শ্রীবরদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহিম দুলাল। ইতিমধ্যে "ডন মাসুদ" এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনে নানা অনিয়মের খবর প্রকাশিত হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সুলতান মাহমুদ, শাকিল, ইসমাইল, শাকিল হাসান, মনিরুজ্জামান মনির, সাজ্জাদ হোসেন, মাজহারুল ইসলাম সহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। এসময় তারা ডন মাসুদ সহ বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার জাহিদ বলেন, আজ রবিবার সকাল সাড়ে নয়টার সময় র্যাব-১৪ অবৈধ বালু ব্যবসায়ী মাসুদকে শ্রীবরদী থানায় হস্তান্তর করেন। আমরা সাড়ে ১১টার সময় তাকে আদালতে সোপর্দ করেছি।