রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২
শিরোনাম

মাঠ জরীপে গুণী শিক্ষক সেরা শিক্ষক সেলিনা আক্তার স্বপ্না


  মো: খোরশেদ আলম, স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশ :  ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৭ দুপুর

প্রাথমিক শিক্ষার আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে নিরবে নিভৃতে পথচলা একজন প্রকৃত মানুষ গড়ার কারিগর জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার ভাবকী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সেলিনা আক্তার স্বপ্না সত্যিকার অর্থেই একজন গুণী শিক্ষক।
 
যিনি ত্যাগ ও নিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষকে ভালবেসে অকৃপণভাবে মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে একটি সত্যিকার সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে সোনার মানুষ তৈরির নেশায় শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়ে জীবনের অধিকাংশ সময় ধরে নিবেদিতপ্রাণ একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের মাতৃস্নেহে পাঠদান করে যাচ্ছেন। সদা হাস্যোজ্ব্যল চৌকষ ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই শিক্ষিকার আচরণে বিদ্যালয়ে আগত কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মায়ের অভাব টেরই পায় না। তার কাছে উচ্চ মেধার শিক্ষার্থী, স্বল্প মেধার শিক্ষার্থী, ধনীর দুলাল, গরীবের সন্তান, ক্ষমতাধর ও ক্ষমতাশূন্য সকলকে সকলের পরিচয় অভিন্ন মনে করে শিক্ষাদান করে থাকেন। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান কোন ভেদাভেদই করেন না তিনি। বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীই তাঁর সম্বন্ধে ভাবে, আমাদের সেলিনা ম্যাডাম আমাকেই বেশী ভালোবাসেন। শিক্ষার্থীদের কেউ অসুস্থ হলে তিনি তাকে দেখতে ছুটে যান শিক্ষার্থীর বাড়ি। তাদের কারও আর্থিক সমস্যা থাকলে তাও দূর করতে চেষ্টা করেন। বিদ্যা শিক্ষা সংক্রান্ত তাদের কোন কৌতূহল বা জিজ্ঞাসা থাকলে তা যথাসাধ্য মিটাতে কোন কার্পণ্য নেই তাঁর। শিক্ষার্থীদের দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, আত্মিক ও ধর্মীয় বিকাশে নিজের মেধা ও যোগ্যতা যথাসাধ্য ব্যয় করেন এই মহিয়সী নারী। কেউ সাক্ষাৎ করতে এলে হাসিমুখে তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বলেন। আবার কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে বিলম্ব হেতু বিচলিত হন না তিনি, বরং ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করেন। কারও প্রয়োজন পূরণে অক্ষম হলে বিনয়ের সঙ্গে নিজের অপারগতা প্রকাশ করেন। কারও বেয়াদবীর জন্য কখনও গালমন্দ করেন না। রূঢ় আচরণ ও কর্কশ ভাষায় কথা বলা থেকে দূরে থাকেন বলেই সকলের প্রিয় শিক্ষিকা সেলিনা আক্তার স্বপ্না।
 
কেউ তার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করলে তিনি তার সঙ্গে কোমল আচরণ করেন এবং ধৈর্য্য ধরেন। স্বামী, মাতা-পিতা, সন্তানাদি, প্রতিবেশী ও চেনা-অচেনা সকলের সাথে তিনি অত্যন্ত ভাল ব্যবহার করেন। কথা বললে বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলেন। বাজে তামাশা কিংবা কারও মনে আঘাত লাগে এমন কথা বলা থেকে বিরত থাকেন। এমন কথা বলেন না যাতে ব্যক্তিত্ব খর্ব হয় এবং মূর্খতা প্রকাশ পায়। তিনি খুব গুরুগম্ভীর নন, বরং সহজ-সরল। যে কেউ সহজেই তাঁর সঙ্গে মিশতে পারেন। নিজের কাজ নিজেই করেন, পারতপক্ষে অন্যের উপর নির্ভর করেন না। অসহায়, ইয়াতীম, বিধবা, রোগী ও অভাবী মানুষের প্রতি সর্বদা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের প্রতি দায়িত্ব পালনে কৃপণতা করেন না। আল্লাহর বান্দা হিসাবে তিনি সকলের সাথে মিলেমিশে বসবাস করেন। তার কথায় ও কাজে স্বীয় বংশীয় কৌলিনতা ফুটে ওঠে। পাঠদানের পাশাপাশি তিনি প্রচুর লেখালেখিও করেন। কবিতা ও নিবন্ধ লেখায় তার রয়েছে অসামান্য দক্ষতা। তিনি প্রতিনিয়ত জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় কবিতা ও কলাম লিখে থাকেন। এছাড়া তিনি শখের বাগান করে থাকেন। অবসর সময় আর সুযোগ পেলে তিনি সামাজিক কর্মকান্ডেও অংশগ্রহণ করে থাকেন। তাঁর স্বপ্ন হলো তার প্রতিটি শিক্ষার্থীই যেন জীবনে মানুষের মতো মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে একেকজন সুনাগরিক হিসেবে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পারে। এই মহতি স্বপ্ন যাকে ঘুমাতে দেয় না। সেই সকলের প্রিয় সেলিনা ম্যাডাম স্বৈরাচারের দালালমুক্ত পরিবেশ ও বৈষম্যবিরোধী চেতনার নতুন বাংলাদেশে এবার মেলান্দহ উপজেলা পর্যায়ে গুণী শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টদের মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেননা, বিগতদিনে প্রকৃত শিক্ষাকে পায়ে দলে বিভিন্ন মহলে তদ্বির আর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী ঘরানার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের কাছে থেকে টিকিট হাসিলের দৌঁড়ে যারা এগিয়ে ছিলেন, শুধুমাত্র তাদেরকেই মূল্যায়নের অসম প্রতিযোগিতায় এতদিন যোগ্যরা কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। আর তাই দীর্ঘদিন পরে হলেও প্রকৃত যোগ্যরা হচ্ছেন মূল্যায়িত। তাইতো ছোটবড় সকলের কাছে প্রিয় শিক্ষিকা সেলিনা আক্তার স্বপ্না কে ঘিরে দাঁনা বাধতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্টদের স্বপ্ন। তাঁরা চান প্রচারবিমূখ নিভৃত এই নিরহঙ্কার প্রকৃত গুণী শিক্ষক শুধু উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে নন জাতীয় পর্যায়ের সাফল্যের শিখরে পৌঁছে গিয়ে তাঁর সঠিক মূল্যায়ন হোক।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত