সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২
শিরোনাম

ব্যাংক মার্জারে যেসব সংকট দেখছেন অর্থনীতিবিদরা


  আরবান ডেস্ক

প্রকাশ :  ২০ আগস্ট ২০২৫, ১১:৪২ দুপুর

বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্জার প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, একীভূতকরণের জন্য চূড়ান্ত করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে এবং একত্রিত হওয়ার ইচ্ছা সমানভাবে নেই। ফলে জোর করে একীভূতকরণ করা হলে সফলতা আসবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার অর্থায়ন করলে বাজেটে আর্থিক চাপ বাড়বে। যেখানে সরকার স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষার মতো অতি প্রয়োজনীয় খাতগুলোতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে পারছে না, সেখানে ব্যাংক মার্জারে এত টাকা কেন দেবে বা কোথা থেকে দেবে- সেই বিষয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অন্যদিকে সরকারি অর্থায়ন থাকা সত্ত্বেও যদি যোগ্য নেতৃত্ব এবং কার্যকর পর্ষদ না থাকে, তবে পুরো পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

একই বিষয়ে সাবেক সিএজি ও অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, ‘বলা হচ্ছে, ব্যাংক মার্জারে ৩৫ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এখন সরকার যদি মার্জার কার্যক্রমে অর্থায়ন করে তবে বাজেটে ঘাটতি বেড়ে যাবে। ফলে সরকার সামাজিক সুরক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যয় করতে পারবে না। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে সরকারের ওপর আর্থিক চাপ বাড়বে।’ এ জন্য প্রয়োজনীয় ও সঠিক নীতি গ্রহণ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, একীভূতকরণের ক্ষেত্রে সরকার যদি ব্যাংকগুলোকে গ্রহণ করে, তবে প্রাথমিকভাবে তাদের মূলধন ঘাটতি পূরণ করতে হবে। সরকারি অর্থায়ন ঋণ হিসেবে না ইকুইটি হিসেবে দেওয়া হবে, তাও ঠিক করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘পর্ষদ গঠন এবং ম্যানেজমেন্ট নিয়োগও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কেননা নতুন পর্ষদের দায়িত্ব হবে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্য কর্মী নিয়োগ করা, পাশাপাশি সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা। সরকার অর্থায়ন করবে, তবে পর্ষদকেই পরিকল্পনার ভিত্তিতে কার্যকরভাবে তার প্রয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ সরকার শুধু মালিকানা গ্রহণ করবে, কিন্তু ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষ এবং যোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন। তা না হলে সরকারি অর্থায়ন থাকা সত্ত্বেও পুরো পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে মূলধন, তারল্য এবং খেলাপিঋণ ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না হলে আমানতকারীদের আস্থা হারানোর ঝুঁকি থাকবে।

একই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, ‘একীভূতকরণ প্রক্রিয়া কেবল তখনই কার্যকর হতে পারে যখন প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী ব্যাংক মনে করবে এটি তাদের জন্য লাভজনক। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশ ব্যাংক একরকম জোর করে ৫টি ব্যাংককে মার্জার করে দিচ্ছে। যেখানে সব ব্যাংক রাজি নয়। তাই জোর করে মার্জার করে দিলে এর সুফল কখনোই পাওয়া যাবে না। পাঁচটি বা ১০টি দুর্বল ব্যাংককে মার্জার করা হলেই যে একটা শক্তিশালী ব্যাংক হয়ে যাবে এরও কোনো ভিত্তি নেই। ব্যাংকগুলোর মূল যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো দূর করার উদ্যোগ না নেওয়া হলে ৫০টি ব্যাংক একত্রিত করলেও কোনো লাভ হবে না। এর জন্য মূল সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সেগুলোকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।’

সরকারি অর্থায়ন নিয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘একসময়ের দুর্দশাগ্রস্ত ওরিয়েন্টাল ব্যাংক, বর্তমানে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক নামে পরিচালিত হচ্ছে। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত ব্যাংকটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক হিসেবেই পরিচালিত হয়ে আসছে, বর্তমানে যার প্রায় ৮০ শতাংশ ঋণই খেলাপি। সঠিক পরিকল্পনা না থাকলে এটি সরকারের অর্থের অপচয়ে পরিণত হতে পারে। তাই মার্জার প্রক্রিয়ায় সরকারি অর্থায়নকে বাস্তবসম্মত, পরিকল্পিত এবং অংশগ্রহণকারীর স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত