বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১
শিরোনাম

মোহনগঞ্জে অবৈধ নিয়োগে ২৭ বছর ধরে শিক্ষকতা রুহুল আমিনের


  মো: আরিফুল ইসলাম

প্রকাশ :  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪৩ দুপুর

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কৃষি শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রুহুল আমিন ভূইয়া। অবৈধ নিয়োগে ২৭ বছর ধরে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।

তাঁর নিয়োগকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। এমনকি পূর্বে কর্মরত প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র দাখিল না করায় তাঁর নিয়োগ অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয়।

এসব কারণে ২০১৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শন রিপোর্টে রুহুল আমিন ভূইয়ার নিয়োগ অবৈধ উল্লেখ করা হয়। ওই সময় পর্যন্ত প্রাপ্ত সরকারি বেতন ভাতা বাবদ ১৭ লাখ ৪৫ হাজার ৯৭৯ টাকা সরাকরি কোষাগারে ফেরত দিতে বলা হয়। 

তবে দীর্ঘ বছরেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। 

এদিকে বালিকা বিদ্যালয়ে কৃষি শিক্ষা সাবজেক্ট পড়ানো হয় না। ফলে কৃষি শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক হয়েও তিনি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিষয়ে ক্লাশ নেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শনকালে শিক্ষক
রুহুল আমিন ভূইয়ার নিয়োগকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকা ও পূর্বে কর্মরত প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র দাখিল না করার বিষয়টি ধরা পড়ে। 

শিক্ষা পরিদর্শক মো. আব্দুস সালাম আজাদ ও সহাকারী শিক্ষা পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই পরিদর্শন রিপোর্ট প্রকাশ হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। 

ওই রিপোর্টে কৃষি বিষয়ের শিক্ষক রুহুল আমিন ভূইয়ার নিয়োগকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকা ও পূর্বে কর্মরত প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র দাখিল না করার বিষয়টি উল্লেখ করেন তাঁরা।

সেই সঙ্গে তাঁর নিয়োগ অবৈধ উল্লেখ করে ওই সময় পর্যন্ত প্রাপ্ত সরকারি বেতন ভাতা বাবদ ১৭ লাখ ৪৫ হাজার ৯৭৯ টাকা সরাকরি কোষাগারে ফেরত দিতে বলা হয়। 

তাঁরা রিপোর্টে লেখেন-  ১৯৯৬ সালের ৬ জুলাই মোহনগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কৃষি শিক্ষা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে  যোগদান করেন মো. রুহুল আমিন ভূইয়া। এরআগে একই বছরের  ৪ জানুয়ারি জাতীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আর নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২৯ জুন। 

তবে নিয়োগ পরীক্ষার কোন ফলাফল শিট হয়নি।  পরদিন ৩০ জুন নিয়োগ কমিটির করা রেজ্যুলেশনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের প্রতিনিধির 'নাম বিহীন সীল' দিয়ে দেখিলাম বলে স্বাক্ষর রয়েছে। ওই নিয়োগ পরীক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ছিলেন নেত্রকোনা আঞ্জুমান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। নাম বিহীন সীল থাকায় পরিদর্শকগণ ওই নিয়োগ পরীক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ছিলেন না বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া নিয়মানুযায়ী  নিয়োগের আগে তিনি (রুহুল আমিন ভূইয়া) পূর্বের প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র জমা দিতে পারেননি। এতে পরিদর্শন রিপোর্টে তাঁর নিয়োগ অবৈধ বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ জাহান। তিনি উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। দীর্ঘবছর ধরে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে ছিলেন প্রধান শিক্ষকের স্বামী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরমেয়র লতিফুর রহমান রতন। গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত তিনি সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।  স্বামী-স্ত্রী সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক থাকায় পরিদর্শন রিপোর্ট আমলে নেওয়া হয়নি জানান স্থানীয়রা।

পরিদর্শন রিপোর্টের বিষয়টি উল্লেখ করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক রুহুল আমিন ভূইয়া বলেন, ওই রিপোর্ট  কলাপাতা ছাড়া আর কিছুই নয়। পরিদর্শনকালে টাকা পয়সা না দেওয়ার কারণে তাঁরা এসব লিখেছেন। এক পর্যায়ে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে লাইন কেটে দেন।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মমতাজ জাহান বলেন, শুধু রুহুল আমিন নয়, ওই রিপোর্টে বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সমস্যার বিষয় উল্লেখ আছে। রিপোর্টের আপত্তির বিষয়গুলো নিষ্পত্তির বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। নিয়োগকালে হয়তো বিদ্যালয়ে কৃষি সাবজেক্ট ছিল। এখন কৃষি শিক্ষা না থাকায় তিনি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান পড়ান। 

 বিষয়টি অবহিত করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল আহমেদ বলেন, এখন ওই বিদ্যালয়ে কোন কমিটি নেই। কমিটি করা হলে পরে সেই কমিটি বিষয়টি দেখবে আশা করছি।

এ ব্যাপারে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)  মো. কামরুজ্জামান বলেন, পরিদর্শন রিপোর্ট বের হয়েছে ২০১৮ সালে। আর এখন ২০২৫ সাল। রিপোর্টের বিষয়ে নিষ্পত্তি  জানাতে হয় এক সপ্তাহ, পনেরদিন বা এক মাসের মধ্যে। ৬-৭ বছর পর আপত্তি দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। আর এমন কোন রিপোর্ট  আপত্তি আমার কার্যায়লের মাধ্যেমে দেওয়া হয়েছে বলে জানা নেই। 

উল্লেখ্য- মোহনগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ মিজবাহ উল হক জাল সনদে চাকরি করছেন বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল। তাঁর চাকরি বাতিলসহ এমপিওভুক্ত না করার বিষয়ে পরিদর্শন রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু রিপোর্ট প্রকাশের পরপরই অনিয়ম করে তাঁকে এমপিও করা হয়। পরে কয়েক বছর চাকরি করার পর শিক্ষক মিজবাহর এমপিও বাতিল করে শিক্ষা বিভাগ। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত মিজবাহর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত