শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১ আশ্বিন ১৪৩২
শিরোনাম

জলবায়ু সম্মেলনে কৃষক ও জেলেদের অধিকার রক্ষা ও সমুন্নত রাখার দাবি


  আরবান ডেস্ক

প্রকাশ :  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৫ বিকাল

বাংলাদেশের মাত্র ১৭% ক্ষুদ্র কৃষক প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়নের আওতায় আসে। ফলে অধিকাংশ কৃষকই ব্যয়বহুল অনানুষ্ঠানিক ঋণের ফাঁদে আটকে থাকে, যা জলবায়ু অভিঘাতে আরও তীব্র হচ্ছে, মঙ্গলবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা এই তথ্য তুলে ধরেন। “কপ-৩০: ক্ষুদ্র কৃষক ও জেলেদের চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশা” শীর্ষক এই আলোচনায় বক্তারা বলেন, কৃষকেরা দেশের জিডিপিতে ১২.৯% অবদান রাখছে পাশাপাশি প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ গ্রামীণ পরিবার তাদের আয়ের উপর নির্ভর করে টিকে আছে, কিন্তু এরাই আর্থিক ও পরিবেশগত বিভিন্ন চাপে এখন জর্জরিত।

দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ ও সিভিল সোসাইটি প্রতিনিধিরা কপ-৩০ কে সামনে রেখে এনএপি (ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান) ও এনডিসি (ন্যাশনালি ডিটারমিনড কন্ট্রিবিউশন) বাস্তবায়নে করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় করেন। তারা জাতীয় নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় কার্যকর অংশগ্রহণ, দেশীয় জ্ঞান ও চর্চার স্বীকৃতি এবং কৃষক ও জেলেদের জলবায়ু অর্থায়ন ও অভিযোজন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান। সভাটি সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।

বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ডিজাস্টার ফোরামের গওহের নঈম ওয়ারহা; সিপিআরডির মো. শামসুদ্দোহা; মৎস্য অধিদপ্তরের ব্লু ইকোনমি শাখার পরিচালক সাজেদুর রহমান; এএফএ-র মো. আমিরুল ইসলাম; সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টারের (এসএসি) ড. মো. ইউনুস আলী; ফসিল ফুয়েল নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি ইনিশিয়েটিভের হারজিত সিং; ওয়েভ ফাউন্ডেশনের মোহসিন আলী; এএলআরডির রওশন জাহান মনি; কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক ড. রাধেশ্যম সরকার; এসবিকেএসের মো. ওবায়দুল হক; বাংলাদেশ ফার্মার্স ফাউন্ডেশনের (বিএফএফ) এ কে এম রোখসানুল ইসলাম লিওন; এবং কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রীর (কেকেএম) আলাউদ্দিন সিকদার।

কোস্ট ফাউন্ডেশনের উপ নির্বাহী পরিচালক, সনত কুমার ভৌমিক মূল প্রবন্ধে বলেন, সরকার ঘোষিত ৪% সুদে কৃষি ঋণ বাস্তবে কৃষকদের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে ব্যাংকিং অবকাঠামোর দুর্বলতা ও নীতিগত জটিলতার কারণে। তিনি আরও বলেন, কৃষকদের অভিযোজন সক্ষমতা না বাড়ালে প্রতিটি জলবায়ু অভিঘাত ভবিষ্যতের এনএপি ও এনডিসি বাস্তবায়নের খরচ আরও বাড়াবে।

মো. শামসুদ্দোহা জলবায়ু অর্থায়নের নামে আসা অর্থের ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানান। তিনি বলেন, সরকার এনডিসি ও এনএপি প্রণয়ন করেছে ভৌগোলিক অঞ্চলের উপর ভিত্তি করে, যেখানে স্থানীয় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর প্রতি গুরুত্ব কম। স্থানীয় পর্যায়ে শাসন কাঠামো না থাকলে জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যাবে না। গওহের নঈম ওয়ারহা বলেন, শুধু জলবায়ু পরিবর্তন নয়, নদী ব্যবস্থাপনার বিশৃঙ্খলাই মূলত পানি সংকট বাড়াচ্ছে। প্রায় ৮০% সংকট আমাদের পানি ব্যবস্থাপনার ত্রুটি থেকে এবং মাত্র ২০% জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে হয়ে থাকে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত না হলে কোনো অভিযোজন পরিকল্পনা সফল হবে না।

হারজিত সিং, ফসিল ফুয়েল নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি ইনিশিয়েটিভের গ্লোবাল এনগেজমেন্ট ডিরেক্টর, কপ-৩০ কে আরেকটি “শূন্য প্রতিশ্রুতির সম্মেলন” না হওয়ার জন্য সতর্ক করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটাই সময় ক্ষুদ্র কৃষক ও জেলেদের একত্রিত হয়ে জলবায়ু ন্যায়বিচারের দাবি জানানোর আমাদের জীবিকার অধিকার, মর্যাদার অধিকার এবং নিরাপদ ভবিষ্যতের অধিকার।

এএফএ-র মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্র কৃষক ও জেলেরা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তাই নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় তাদের মতামত অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক। ড. মো. ইউনুস আলী কৃষক নেতাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্ব দেন।

কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রীর সভাপতি মো. আলাউদ্দিন সিকদার বলেন, উপকূলে লবণাক্ততা ও মিঠা পানির অভাবে কৃষিজমি অনাবাদি হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, বাঁধ ও স্লুইসগেট মেরামত ছাড়া কৃষক বাঁচতে পারবে না। স্থানীয় বীজ সংরক্ষণ ও প্রকল্পে কৃষকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারাও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভূমিকা রাখতে পারে। মো. ওবায়দুল হক বলেন, কৃষক সংগঠনের সদস্যদের মালিকানা বোধ গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা টেকসই ও স্বনির্ভর হতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত