সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল এখনও অনিশ্চিত
আরবান ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৩ দুপুর
সাধারণত অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের প্রথম দিকে শুরু হয় দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল কিন্তু এবার সরকারের নেওয়া উদ্যোগ ও প্রশাসনিক বিধিনিষেধের জটিলতায় এখনও তা শুরু করা সম্ভব হয়নি। এমনকি কবে নাগাদ জাহাজ চলাচল শুরু হবে, সেটাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভায় সেন্টমার্টিনে নানা বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ অক্টোবর মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করে বলা হয়, সেন্টমার্টিনে নৌযান চলাচলের বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেবে।
পরিপত্রে আরও বলা হয়, নভেম্বরে দ্বীপে পর্যটক গেলেও দিনে ফিরে আসতে হবে, সেখানে রাত্রিযাপন করা যাবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাত্রিযাপন করা যাবে। প্রতিদিন পর্যটকের সংখ্যা গড়ে ২ হাজারের বেশি হবে না। দ্বীপে শব্দদূষণ করা যাবে না, রাতে আলো জ্বালানো যাবে না, বার-বি-কিউ পার্টি করা যাবে না।
প্রতিবছরের নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে পর্যটন মৌসুম। এবারের মৌসুমে সেন্টমার্টিনে পর্যটক নিয়ে চলাচলের জন্য তৈরি আছে সাড়ে তিনশ যাত্রী ধারণক্ষমতার কেয়ারী সিনবাদ, সাড়ে সাতশ যাত্রী ধারণক্ষমতায় কর্ণফুলী আর সাড়ে আটশ যাত্রী ধারণক্ষমতার বার আউলিয়া জাহাজ কিন্তু সেন্টমার্টিন ঘিরে সরকারের নির্দেশনার পরে প্রশাসনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষাতেই পেরিয়ে যাচ্ছে সময়।
সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিবার অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের প্রথম দিন থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়। এবারও ৩টি জাহাজ প্রস্তুতি নিয়ে প্রশাসনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে কিন্তু এখনও মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, “সম্মতি পেতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন। সম্মতি না থাকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিচ্ছে না। কবে এই অনুমতি পাওয়া যাবে তাও নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।”
যদিও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলছেন, “সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচলে এরই মধ্যে অনুমতি দিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি সাপেক্ষে জাহাজ চলাচলের কথা রয়েছে।”
সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াগত কাজ চলছে। এটি চূড়ান্ত হলে দ্রুত জাহাজ চলাচল শুরু হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
তবে সেন্টমার্টিন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনিক বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় জাহাজ চলাচলের অনুমতির বিষয়টি আটকে গেছে। তবে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কারও বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। পর্যটকের সংখ্যা সীমিত করার সিদ্ধান্ত কক্সবাজারের পর্যটনের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে তিনি তা বাতিলেরও দাবি করেন।
একই দাবি জানিয়ে যাচ্ছে সেন্টমার্টিনস দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোট নামের এক সংগঠন। সেখানে রাতযাপন নিষিদ্ধের প্রতিবাদে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে সেন্টমার্টিন সংশ্লিষ্ট ১৩ সংগঠনের এই জোট।
জোটের চেয়ারম্যান শিবলুল আজম কোরেশী ও সভাপতি এম এম সাদেক লাবু বলছেন, “সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ এবং ভ্রমণ সীমিত করায় পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত তিন লাখের বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতির মুখে পড়েছে।”
তাছাড়া ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র আঘাতে কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্র সৈকতের নৌ বাহিনীর জেটি দুই খণ্ড হওয়ার পর এটি সংস্কারের দাবিতে একপক্ষ এবং উচ্ছেদের দাবিতে আরেকপক্ষ নানা কর্মসূচি পালন করছে।
জেটিটি সৈকতকে দুই খণ্ডিত করেছে এবং পরিবেশের ক্ষতি করছে দাবি করে এটি উচ্ছেদের জন্য মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিও (বেলা) নোটিশ দিয়ে এটি উচ্ছেদের কথা বলেছে। তবে জেটি উচ্ছেদের ‘পাঁয়তারা’ বন্ধ এবং সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা।
তথ্য বলছে, ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক নৌ-মহড়া উপলক্ষে জেটিটি নির্মাণ করে নৌবাহিনী। মহড়া শেষে জেটিটি দিয়ে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটন মৌসুমে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়। গত ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে উত্তাল সমুদ্রে সংস্কারকাজে নিয়োজিত একটি বার্জের ধাক্কায় জেটিটির একটি অংশ ভেঙে যায়। এর পর জেটির সংস্কারকাজ শুরু না করায় বিপত্তি তৈরি হয় সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ চলাচলে।