শেরপুর-১ আসনে ৪৫ বছর পর আলোর দিশারী হয়ে এলেন বিএনপি নেতা হযরত আলী!
রফিক মজিদ, শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৪ দুপুর
প্রায় ৪৫ বছর যাবত শেরপুর (সদর)-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের বা বিএনপির এমপি নেই। ১৯৭৯ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট খন্দকার আব্দুল হামিদ। সে সময় তিনি মন্ত্রীও ছিলেন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ১৫ দিনের জন্য এমপি হয়েছিলেন বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মোঃ নজরুল ইসলাম। এর আগে এবং পরে আসনটি দখলে ছিল জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের। অথচ শেরপুর সদর উপজেলা বা শেরপুর (সদর)-১ আসনটি মূলত বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি ছিল। কিন্তু খন্দকার আব্দুল হামিদের পর যোগ্য নেতা এবং ভোট ও রাজনৈতিক কলঙ্কের কারণে এ আসনটি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি বিএনপির। যোগ্য নেতার শূন্যতার পাশাপাশি আসনটি চারদলীয় জোটের কারণে বেশ কয়েকবার জামায়েতকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। একই সাথে বিগত স্বৈরশাসক দিনের ভোট রাতে এবং ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে বিএনপির প্রার্থীকে জয়ী হতে দেয়নি। ফলে বিএনপির ভোটাররা হতাশ হয়ে পড়ে এবং অনেক ভোটার ছড়িয়ে ছিটিয়ে চলে যায়।
তবে বর্তমানে ৪৫ বছর পর আবারও আশার আলো দেখছে শেরপুর বিএনপি তথা সদর উপজেলাবাসী। ২০১৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রায় আট বছর দায়িত্ব পালন করেছেন মোঃ হযরত আলী। চলতি বছরের ৩ নভেম্বর জেলা বিএনপির ৩ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে আহবায়ক হয়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ হযরত আলী এবং সদস্য সচিব হয়েছেন এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ও যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল আউয়াল চৌধুরী।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও শরিকরা কেউই নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। বিগত ১৮ সালের নির্বাচনে বর্তমান আহ্বায়ক মোঃ হযরত আলী জেলে থাকার কারণে তার মেয়ে ডা: সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক হুইপ আতিউর রহমান আতিক রাতের ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হয়। এর আগে ১৪ সালের নির্বাচনে জোটগত কারণে এ আসনে বিএনপি কোন প্রার্থী না থাকার কারণে অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আতিউর রহমান আতিক। তারও আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জোটগত কারণে আসনটি ছেড়ে দেয় জামায়াতের কামারুজ্জামানকে। সেবারও ভোট ছিনতাই হয়।
১৯৭৯ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে খন্দকার আব্দুল হামিদ নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৮৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এতে সদর আসনে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থীর শূন্যতা সৃষ্টি হয়। এরপর ১৯৮৬, ৮৮ ও ৯১ এর নির্বাচনে তৎকালীন জাতীয় পার্টি থেকে টানা তিনবারের জন্য এমপি নির্বাচনের হয় শাহ রফিকুল বারী চৌধুরী। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে বিএনপির মো: নজরুল ইসলাম নির্বাচন হলেও ১৫ দিন পর ওই সংসদ ভেঙে যায়। এরপর একই সনে পরবর্তী নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আতিউর রহমান আতিকের বিজয় হয়। তারপর ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও ভোট ডাকাতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিউর রহমান আতিক এর বিজয় হন।
বিএনপি'র মো: হযরত আলী সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন আট বছরে দলকে গুছিয়েছেন নিজের হাতে। দীর্ঘ এ সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নিপীড়ন অত্যাচার ও মামলায় হেনস্থার শিকার শত শত নেতাকর্মীর পাশে ছিলেন আপন জনের মত। এই আট বছরে তিনিও নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জেল খেটেছেন প্রায় ৩২ মাস। আর মামলা খেয়েছেন ৪৫টি। তার ব্যবসা-বাণিজ্য সহায় সম্বল প্রায় ধ্বংসের পথে এই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হওয়ার কারণে। সর্বশেষ গত ২৭ জুলাই সদর উপজেলার কুসংহাহাটি এলাকায় তার নিজস্ব রোজবার্গ অটো রাইস মিলে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট পুলিশ হামলায় চালিয়ে রাইস মিলের প্রায় ১০ কোটি টাকার মালামাল লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়ে নষ্ট করেন। তবুও তিনি প্রাণপণে চেষ্টা করেছেন দলের নেতাকর্মীদের ভালো রাখতে। বিপদ আপদে পাশে থেকেছেন তৃণমূলসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মী ছাড়াও এলাকার সাধারণ নিরীহ মানুষের। ফলে এলাকায় তাকে আলোর দিশারী হিসেবেই দেখছে সাধারণ মানুষ। নেতাকর্মীরাও বেশ উজ্জীবিত।
নতুন আহবায়ক কমিটির আহবায়ক হিসেবে হযরত আলী দায়িত্ব পাওয়ার পর দলের যুগ্ম আহবায়ক সাবেক ছাত্রদল ও যুবদল নেতা আব্দুল আউয়াল চৌধুরী বলেন, দলকে সুসংগঠিত করতে নতুন আহবায়ক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী দীর্ঘদিন থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া শেরপুর-১ সদর আসনে দীর্ঘদিন থেকেই আমরা ধানের শীষের এমপি পাচ্ছি না। এবার সে আসার আলো জেগে উঠেছে।
সাবেক ছাত্রদল নেতা ফজলুর রহমান তারা বলেন, নতুন আহবায় কমিটির নেতা মোঃ হযরত আলী আহ্বায়ক হওয়ার পর থেকেই দলের ভিতরে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন থেকেই দলকে সংগঠিত করতেও কাজ করে যাচ্ছে। ফলে শেরপুর-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে তিনি ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।
জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মোঃ শওকত হোসেন বলেন, আমাদের নেতা মোঃ হযরত আলী দীর্ঘদিন থেকেই দল এবং এলাকার সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছে। এবার শেরপুর-১ সদর আসনে ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী করতে আমরা আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ রয়েছি।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নিয়ামুল হাসান আনন্দ বলেন, নতুন আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে আমরা একজন ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতা পেয়েছি। যার ফলে দীর্ঘদিন পর শেরপুর-১ সদর আসনে ধানের শীষের এমপি পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হয়েছে।