বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত সোহাগের চার মাস পর লাশ উত্তোলন
মো: আরিফুল ইসলাম
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৪ বিকাল
জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সোহাগ মিয়া (১৪) নামে কিশোরের লাশ চার মাস পর কবর থেকে তোলা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের ঘটনায় পরিবারের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের আদেশে বুধবার সকালে তার লাশ তোলা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেলের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সোহাগ মিয়া নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের বড়খাপন গ্রামের মো. শাফায়েত মিয়া'র ছেলে।
গত ১৯ জুলাই রাজধানীর বাড্ডা নয়াবাজার এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় সোহাগ। দেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতি থাকায় সেসময় ময়নাতদন্ত ছাড়াই গ্রামের নিয়ে লাশ দাফন করা হয়।
সোহাগের মৃত্যুর ঘটনায় গত ২০ আগস্ট রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন তার বাবা শাফায়েত। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ৯১ জনের নাম উল্লেখ'সহ অজ্ঞানামা আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাধজানীর মালিবাগ সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহটি দাফন করা হয়েছিল। তদন্তের স্বার্থে চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে মরদেহের ময়নাতদন্তের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। আদালতের আদেশ পাওয়ার পর বুধবার সকালে মরদেহটি তোলা হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইফতেখার হোসেনসহ কলমাকান্দা থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্য।
পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে,অভাবের সংসারে হাল ধরতে কিশোর বয়সেই রাজধানীর অলিগলিতে রিকশা চালানো শুরু করে সোহাগ মিয়া (১৪)। তার দরিদ্র বাবাও রিকশা চালান।
চার ভাই আর মা-বাবা মিলে ছয়জনের সংসারের খরচের সিংহভাগ চলে সোহাগের আয়ে। গত ১৯ জুলাই কারফিউ চলাকালেও পেটের দায়ে রিকশা নিয়ে বের হয় সোহাগ। নতুন বাজারের অলি-গলিতে দিনভর যতটুকু পেরেছে রিকশা চালিয়ে কিছু আয় করেছে। সন্ধ্যায় গ্যারেজে রিকশা রেখে বাসায় ফেরার সময় হঠাৎ কোখায় থেকে এসে একটি গুলি সোহাগের মাথায় লাগে। গুলিটি ডান কানের পাশ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে অনেকটা মগজ বের হয়ে গেছে। উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করে কাছকাছি অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে গেলে ততক্ষণে তার মৃত্যু হয়।
সেসময় দেশের পরিস্থিতি খারাপ থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই ২০ জুলাই সকালে গ্রামের বাড়ি নিয়ে তাকে দাফন করা হয়।
কলমাকান্দা থানার ওসি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন সোহাগের লাশ উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সোহাগের চাচা সফিকুল ইসলাম আরও বলেন, সেখানকার চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন, বাড়িতে নিয়ে যেতে হলে লাশ দ্রুত বের করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাই দেরি না করে লাশ দ্রত একটা পিকআপ ভ্যানে করে নেত্রকোনার পথে রওয়ানা করা হয়। শেষ রাতে লাশ গ্রামের বাগিদে এসে পৌঁছায়। পরে শনিবার ১০টায় জানাযা শেষে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।