বাজেট বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে সরকার
আরবান ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১০ দুপুর
বাজেট বাস্তবায়নে জোর দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থ বিভাগ বলেছে, দক্ষতা, সক্ষমতা, রাজস্ব আহরণ ও সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবই পরিপূর্ণভাবে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বাজেটের আকার যৌক্তিক করতে এ বছর আগেভাগে বাজেট সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ বিভাগ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৪ মাস না যেতেই বাজেট বরাদ্দ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাজেট সহায়তা বাবদ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছে সরকার।
বাজেট বাস্তবায়নে নির্দেশনা : সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বছরভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট ক্ষমতা অর্জন করলেও সময়মতো ও সুষ্ঠু বাজেট বাস্তবায়ন এখনও একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে অর্থ বিভাগ। এ ক্ষেত্রে অর্থবছরের শুরুতে বাজেট বাস্তবায়ন ও রাজস্ব আহরণের গতি থেকে বেরিয়ে আসতে এবং সক্ষমতা বাড়াতে করণীয় সম্পর্কে একটি পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা ছাড়া অন্য সব আইটেমের বিপরীতে ব্যয়ের পরিমাণ কম থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মেরামত সংরক্ষণ, নির্মাণ ও পূর্ত কাজ এবং মালামাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে অর্থবছরের শেষদিকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না উপরন্তু বছরের শেষে এসে সরকারকে অপরিকল্পিত ঋণের দায়ভার গ্রহণ করতে হয়। ফলে আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যায় না। তাই বাজেট সুষ্ঠুভাবে ও সময়মতো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে অপরিকল্পিত সরকারি ঋণ এড়ানো সম্ভব।
পরিপত্রে অর্থবছরের শুরুতেই ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, যথাযথভাবে সেটি বাস্তবায়ন এবং বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অগ্রগতি পরিবীক্ষণের জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নতুন নীতি, কর্মসূচি ও কার্যক্রম যথাসময়ে ও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রদত্ত ফরম ব্যবহার করে পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশনাও দেওয়া হয় পরিপত্রে।
আগেভাগেই কাটছাঁট : চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার রয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। ৪ মাস যেতে না যেতে বাজেট বরাদ্দের ৭০ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ফলে চলতি অর্থবছরের জন্য সংশোধিত বাজেটের আকার হতে পারে ৭ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা, যা মূল বাজেটের ৯ শতাংশ কম। গত অর্থবছরে তা ছিল ৬ শতাংশ।
অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে বাজেটের আকার ৭০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে আনার একটি প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। এটি নিয়ে আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এরপর আগামী মাসে অর্থ উপদেষ্টার কাছে সংশোধিত বাজেটের একটি আকার উপস্থাপন করা হবে। আর ডিসেম্বর মাসে সংশোধিত বাজেটটি চূড়ান্ত করা হবে। এ ছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারও প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে আনা হবে। চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার নির্ধারিত রয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এটি কমিয়ে ২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বাজেট বাস্তবায়নের জন্য অধিক পরিমাণে ব্যাংক থেকে যেন ঋণ নিতে না হয় তার জন্যও বাজেটকে ছোট করা হচ্ছে। বাজেট বাস্তবায়নের জন্য সরকারের আয় বাড়ানো যাচ্ছে না।
উন্নয়ন সহযোগীদের সাড়া : অন্যদিকে বাজেট সহায়তা বাবদ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছে সরকার। বড় উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে কয়েক দফায় বড় অঙ্কের বাজেট সহায়তা পেতে যাচ্ছে সরকার। জাপান, চীন ও কোরিয়ার মতো দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী দেশের কাছ থেকেও সহায়তা পাওয়া যাবে। এর ফলে চলতি পঞ্জিকা বছরের বাকি দুই মাসের মধ্যেই প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যুক্ত হতে পারে। চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৬০০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার অনুমোদন হতে পারে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭২ হাজার কোটি টাকা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে বাজেট সহায়তার মধ্যে আইএমএফ অনুমোদন দিতে পারে ৩০০ কোটি ডলার। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের ১৫০ কোটি ডলার ও এডিবির ১৩৫ কোটি ডলার দেওয়ার কথা রয়েছে। আইএমএফের ৩০০ কোটি ডলার চলমান সংস্কার কার্যক্রমে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে। সংস্থার এ সহায়তা আগের প্রতিশ্রুত ৪৭০ কোটি ডলারের অতিরিক্ত।
ইআরডি সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ কম নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। কারণ স্থানীয় উৎসের ঋণে একে তো সুদ বেশি, আবার সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণ পেতে সমস্যা হয়। এ ছাড়া স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের আগ পর্যন্ত বিদেশি উৎস থেকে যত বেশি নমনীয় ঋণ নেওয়া সম্ভব, সেই কৌশল রয়েছে সরকারের। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বর্তমানের মতো নমনীয় সুদে ঋণ পাওয়া যাবে না।