যায়যায়দিনের ডিক্লারেশন বাতিলের প্রতিবাদে পূর্বধলায় মানববন্ধন

নাহিদ আলম, স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:২১ দুপুর

দৈনিক যায়যায়দিনের ডিক্লারেশন বাতিলের প্রতিবাদে নেত্রকোনার পূর্বধলায় আজ শুক্রবার মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
যায়যায়দিন পত্রিকার পাঠক সংগঠন জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরামের আয়োজনে এবং পূর্বধলা প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় পূর্বধলা প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসুচী পালিত হয়।
কর্মসূচীর শুরুতেই ফোরামের আহবায়ক জাকির আহমদ খান কামালের সভাপতিত্বে পূর্বধলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সবার উপস্থিতিতে প্রতিবাদ লিপি পাঠ করেন যায়যায়দিনের পূর্বধলা উপজেলা প্রতিনিধি মো: জায়েজুল ইসলাম। পরে প্রেসক্লাবের সামনে সবার অংশগ্রহনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত কর্মসুচীতে উপস্থিত ছিলেন, পূর্বধলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জুলফিকার আলী শাহীন, সহ সভাপতি নূর আহাম্মদ খান রতন, সাবেক সভাপতি ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার পূর্বধলা উপজেলা প্রতিনিধি মো: শফিকুল আলম শাহিন, পূর্বধলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও কালেরকন্ঠের পূর্বধলা উপজেলা প্রতিনিধি মো: গোলাম মোস্তফা, প্রেসক্লাবের সদস্য ও দৈনিক সংবাদের উপজেলা প্রতিনিধি মো: এমদাদুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক সুলেমান কবীর পাপ্পু, ক্লাবের সদস্য ও প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার পূর্বধলা উপজেলা প্রতিনিধি মো: আল মুনসুর, ক্লাবের সদস্য ও মানবকন্ঠের পূর্বধলা উপজেলা প্রতিনিধি সাকিব আব্দুল্লাহ, ভোরের ডাক পত্রিকার পূর্বধলা প্রতিনিধি মো: শফিকুল ইসলাম খান, সাংবাদিক জিয়াউর রহমান, আরবানের স্টাফ রিপোর্টার নাহিদ আলম, সকালের সময় পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি মো: মামুন, মানবজমিনের পূর্বধলা উপজেলা প্রতিনিধি মো: জুবায়েদ হোসেন বাচ্ছু, রেডলানইন প্রতিনিধি অভি দত্ত প্রমুখ।
এ সময় মানববন্ধনে অবিলম্বে দৈনিক যায়যায়দিনের ডিক্লারেশন চালুর দাবীতে বিভিন্ন প্লেকার্ড প্রদর্শন করতে দেয়া যায়। প্রতিবাদ লিপিতে জানানো হয় বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক যায়াযায়দিন পত্রিকাটি দুই যুগের উপর সময় ধরে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন মাধ্যমে পাঠক হৃদয়ের স্থান করে নিয়েছে। পত্রিকাটির শুরুর দিকে ২০০৭সালে আর্থিক সংকটে পড়ে তৎকালীন সম্পাদক জনাব শফিক রেহমান দৈনিক যায়যায়দিন পাবলিকেসন্স-এর শেয়ার এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাঈদ হোসেন চৌধুরীর কাছে বিক্রি করে দেন। ২০০৭ সালের ২৩ মার্চ ফরম-১১৭ এর মাধ্যমে জনাব শফিক রেহমান, তার স্ত্রী তালেয়া রহমান এবং ছেলে সুমিত রহমান তাদের যায়যায়দিন পাবলিকেসন্সের সব শেয়ার সাঈদ হোসেন চৌধুরী ও আবুল হাসান মো. আল ফারুক বরাবর হস্তান্তর করেন। এর দুইদিন পর অর্থাৎ ২৫ মার্চ ২০০৭ তারিখ শফিক রেহমান শেয়ার হস্তান্তরসহ সব প্রক্রিয়া শেষে, ২০০৭ সালের ১৭ জুলাই অতিরিক্ত ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে উপস্থিত হয়ে যায়যায়দিনের প্রকাশকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে উপস্থিত হয়ে আবুল হাসান মো. আল-ফারুক যায়যায়দিনের প্রকাশকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি পদত্যাগ করলে ২০১২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদ হোসেন চৌধুরী যায়যায়দিনের প্রকাশক ও মুদ্রাকরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওই সময় থেকে সাঈদ হোসেন চৌধুরী দৈনিক যায়যায়দিনের প্রকাশক ও মুদ্রাকর হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
আরও বলা হয়, জনাব শফিক রেহমান ২০০৭ সালের ১৭ জুলাই দৈনিক ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকার প্রকাশকের দায়িত্বভার থেকে পদত্যাগ করলেও ২০০৮ সালের ৬ মে পর্যন্ত বেতনভুক্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের ৫ মে তিনি স্বেচ্ছায় সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এ বিষয়ে ৬ মে ২০০৮ সালে যায়যায়দিন ও সমকালসহ একাধিক জাতীয় দৈনিকেও এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়।
জনাব শফিক রেহমান পদত্যাগ করার পর শহীদুল হক খান এবং পরে বরুণ শংকর দৈনিক যায়যায়দিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অনুমতিক্রমে ২০০৮ সালের ২৩ নভেম্বর কাজী রুকুনউদ্দীন আহমেদ যায়যায়দিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করে উল্লেখিত সময় থেকে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
বিগত আওয়ামী সরকারের পতনের পর সাঈদ হোসেন চৌধুরীর মালিকানাধীন দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকাটি দখল করে নিতে বেশকিছু দুস্কৃতিকারী পত্রিকার প্রধান কার্যালয়, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল’ এইচআরসি মিডিয়া ভবনে কয়েক দফা হামলা চালায়। এ ব্যাপারে গত ২৪ অক্টোবর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়। পরে গত ১৫ ডিসেম্বর জনাব শফিক রেহমানকে সামনে রেখে ওই চক্র তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের দৈনিক যায়যায়দিনের প্রধান কার্যালয় দখল করে নেয়। তখন থেকে অবৈধভাবে দৈনিক যায়যায়দিনের মূল লোগোর সঙ্গে হুবহু মিল রেখে ‘দৈনিক যায়যায়দিন প্রতিদিন’ নামের একটি পত্রিকা প্রকাশ করছে; যা আইনগতভাবে অবৈধ।
এখানে উল্লেখ্য যে, জনাব শফিক রেহমান যায়যায়দিনের সব বিক্রি করে দিয়ে বিদেশ চলে গিয়ে দীর্ঘদিন প্রবাসে বসবাস করলেও যায়যায়দিনের মালিকানা তার কাছ থেকে বে-আইনীভাবে জোর পুর্বক চিনিয়ে নেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ তোলে কোন কথা বলেননি বা কোন একটি বিবৃতিও দেননি।
এদিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল’ যায়যায়দিন কার্যালয় ও প্রেস বেদখল হওয়ার পর বিধি মোতাবেক ডিসি অফিসকে অবহিত করে অন্য প্রেস থেকে যায়যায়দিন পত্রিকা ছাপানোর ব্যবস্থা করা হয়। পর পর দু’টি প্রেস পরিবর্তনের বিষয়টিও যথারীতি ডিসি অফিসকে জানানো হয়। কিন্তু ডিসি অফিস জনাব শফিক রহমানের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঠুনকো অজুহাতে ১০ ফেব্রুয়ারি যায়যায়দিন পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করে। অথচ এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি সাঈদ হোসেন চৌধুরীর এক রীট পিটিশনের প্রেক্ষিতে হাই কোর্ট দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার সবকিছুই সাঈদ হোসেন চৌধুরীর পক্ষে থাকবে বলে তিন মাসের ‘স্থিতাবস্থা’ দেন।
একটি স্বাধীন গণমাধ্যমের উপর এমন নগ্ন হস্তক্ষেপের আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ইতিমধ্যে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সহ সারাদেশে সাংবাদিক সংগঠনগুলো এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তারা বলছে, একটি বিশেষ মহলকে সন্তুষ্ট করার জন্য ন্যক্কারজনকভাবে পবিত্র রমজান মাসে ঈদের পূর্ব মুহূর্তে যায়যায়দিন পত্রিকাটির ডিক্লারেশন বাতিল করে কয়েকশ' সাংবাদিক-কর্মচারীর জীবন জীবিকাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এহেন অমানবিক কর্মকাণ্ড মেনে নেয়া যায়না।
মাননীয় তথ্য উপদেষ্টার প্রতি আমাদের আবেদন অবিলম্বে যায়যায়দিন পত্রিকার 'ডিক্লারেশন বাতিলের আদেশ প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় পত্রিকার প্রতিনিধিসহ সাংবাদিক সমাজ রাজপথে নেমে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলবে।