ঢাকা, মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১
শিরোনাম

বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব আগামী ৩১ জানুয়ারি, দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে ধোঁয়াশা


  আরবান ডেস্ক

প্রকাশ :  ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৪ দুপুর

টঙ্গীর তুরাগ তীরে তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব আগামী ৩১ জানুয়ারি শুরুর ‘নিশ্চয়তা’ দিলেও দ্বিতীয় পর্বের আয়োজক সাদপন্থিদের জমায়েতের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক।
 
তিনি বলেন, ‘৩১ জানুয়ারি থেকে প্রথম পর্যায়ের ইজতেমা হচ্ছে। সে বিষয়ে কোনো বাধা নেই। পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে। দ্বিতীয় পর্বের যে ঘোষণা, সেই ঘোষণার বিষয়েই তো আমাদের ১৭ তারিখের পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ১৭ ডিসেম্বর হত্যাকাণ্ডের পরে হাত ও টঙ্গীর ইজতেমার মাঠ সাধারণ মুসল্লিদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। তাদের আসলে সেখানে ইজতেমা করার কোনো নৈতিক অধিকার থাকে না।’
 
মামুনুল হক বলেন, ‘যদি হত্যাকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, হত্যাকারী কীভাবে আবার ইজতেমা করে? সেটি প্রশাসনের কাছেই আমরা জানতে চাই।’ শনিবার দুপুরে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
 
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রথম পর্বে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি ইজতেমায় অংশ নেবেন বাংলাদেশের কাকরাইল মারকাজের মাওলানা জুবায়ের আহমদের অনুসারী ‘জুবায়েরপন্থিরা’ এবং দ্বিতীয় পর্বে ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি অংশ নেবেন দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারী ‘সাদপন্থিরা’। তাবলিগের দুই গ্রুপের চলমান বিবাদের মধ্যে গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে সংঘর্ষে তিনজনের প্রাণহানির পর থেকে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।  
 
‘গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে সাদপন্থি কর্তৃক টঙ্গী ময়দানে অতর্কিত হামলা ও নৃশংস হত্যকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে এবং দাওয়াত ও তাবলিগের চলমান ইস্যুতে’ শনিবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ‘জুবায়েরপন্থি’ ওলামায়ে-মাশায়েখরা-যারা নিজেদের ‘শুরায়ে নিজাম’ বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। সংবাদ সম্মেলনে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ এবং দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীদের পক্ষে ‘সাদপন্থিদের নিষিদ্ধের’ দাবি তুলে ধরে আগামী ১০ ও ২৫ জানুয়ারি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন নাজমুল হাসান কাসেমী। 
 
তিনি বলেন, ‘দাওয়াত ও তাবলিগের সুন্দর দ্বীনি মেহনত ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে আজ বহুদিন থেকে সমস্যায় জর্জরিত-সংকটে নিপতিত। সাদ সাহেবের অন্ধ অনুসরণকারীদের অজ্ঞতা, উগ্রতা, একগুঁয়েমি ও উশৃঙ্খলতার কারণে প্রশাসনের নানাবিধ উদ্যোগ সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চলে আসা মতবিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ধর্ম উপদেষ্টার যৌথ উদ্যোগে চলমান সংকট নিরসন ও বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপও দেওয়া হয়েছিল। বিগত বছরগুলোর ন্যায় চলে আসা ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলতি বছরেও দুই পর্বে ইজতেমার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
 
কিন্তু এরই মধ্যে সাদপন্থিদের ‘জোড় ইজতেমার’ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে আলোচনার আহবান ‘প্রত্যাখ্যান’ করে গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে ইজতেমার মাঠে তারা হামলা চালিয়ে তিনজনকে হত্যা করে। এ অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বকারীদের মধ্যে প্রথম সারির অপরাধীরা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেরালেও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একবার এমনই ‘অতর্কিত হামলা চালিয়ে’ সাদপন্থিরা ইজতেমার মাঠে হত্যাকাণ্ডসহ প্রায় পাঁচ হাজার সাথীকে আহত করেছিল। সেই জঘন্য হত্যা ও হামলাকাণ্ডের বিচার হলে আর ২০২৪-এর ডিসেম্বরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটত না। এবারও যদি তারা ছাড় পেয়ে যায় তা হলে তারা ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনার জন্ম দিতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০১৮ ও ২০২৪ সালের হত্যাকাণ্ডসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের দায়ে সাদপন্থিদের নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছি এবং ১৭ ডিসেম্বরে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দায়েরকৃত মামলার যথাযথ নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।’ 
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত