বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১
শিরোনাম

বিয়ের সময় ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন প্রবীর মিত্র


  আরবান ডেস্ক

প্রকাশ :  ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:১২ দুপুর

ছবি: সংগৃহীত

নামের কারণে প্রবীর মিত্র হিন্দু না মুসলাম এই প্রশ্ন আছে অনেকের মনে। বিষয়টি নিজেই খোলসা করেছিলেন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। বিষয়টি খোলাসা করেছেন শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরও। তিনি জানিয়েছেন, প্রবীর মিত্র ভাই মুসলমানই ছিলেন। ধর্মমতে সোমবার (৬ জানুয়ারি) তার প্রথম জানাজা হবে এফডিসিতে, এরপর চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। জানাজা শেষে তাকে আজিমপুর কবরস্থান দাফন করা হবে।

ঢাকাই সিনেমার প্রবীণ অভিনেতা ‘রঙিন নবাব’ খ্যাত প্রবীর মিত্র (৮৩) আর নেই। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই বর্ষীয়ান অভিনেতার মৃত্যু হয়। নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে গেল ২২ ডিসেম্বর থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন প্রবীর মিত্র।

এক সাক্ষাৎকারে প্রবীর মিত্র নিজে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। সেই সাক্ষাৎকারে প্রবীর মিত্রকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তো কনভার্ট হয়েই ওর মাকে (স্ত্রী) বিয়ে করেছিলাম। তখন মুসলমান হয়েছিলাম। তখন প্রয়োজন হয়েছিল মুসলমান হওয়া, এখনও সে ধর্মেই আছি।’

জানা গেছে, প্রবীর মিত্র তার প্রেমিকা অজন্তাকে বিয়ে করেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, বিয়ে করার সময় তিনি হিন্দুধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন এবং এই ধর্মেই আছেন।

অজন্তা ২০০০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এই দম্পতির তিন ছেলে ও এক মেয়ে। তারা হলেন- মিঠুন মিত্র, ফেরদৌস পারভীন, সিফাত ইসলাম ও সামিউল ইসলাম। ছোট ছেলে সামিউল ২০১২ সালে ৭ই মে মৃত্যুবরণ করেন।

প্রবীর মিত্রের জানাজা হবে, কারণ কায়েস্থ গোত্রের এই খ্যাতিমান অভিনেতা ইসলাম গ্রহণ করে নিজের নাম রাখেন হাসান ইমাম। প্রবীর মিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তার পুত্রবধূ সো‌নিয়া ইসলামও সেটি জানিয়েছেন।

তিনি জানান, রোববার রাতে গোসল শেষে ফ্রিজার গাড়িতে প্রবীর মিত্রের লাশ ধানমন্ডির বাসায় রাখা হয়েছে। সোমবার জোহরের নামাজের পর এফডিসিতে প্রথম জানাজা হবে। এরপর চ্যানেল আইতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রবীর মিত্র ‘লালকুটি’ থিয়েটার গ্রুপে অভিনয়ের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে পরিচালক এইচ আকবরের হাত ধরে ‘জলছবি’ শিরোনামে সিনেমার মধ্য দিয়েছে বড়পর্দায় তার অভিষেক হয়। 

ক্যারিয়ারের শুরুতে নায়ক চরিত্রে দেখা গেলেও বেশির ভাগ সিনেমায় চরিত্রাভিনেতা হিসেবে দেখা মিলেছে তার। অভিনয়ের বাইরে প্রবীর মিত্র ষাটের দশকে ঢাকা ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেট খেলেছেন, ছিলেন অধিনায়ক। একই সময় তিনি ফার্স্ট ডিভিশন হকি খেলেছেন ফায়ার সার্ভিসের হয়ে। এ ছাড়া কামাল স্পোর্টিংয়ের হয়ে সেকেন্ড ডিভিশন ফুটবলও খেলেছেন।

সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় অভিনয় শুরু করেন প্রবীর মিত্র। এইচ আকবর পরিচালত ‘জলছবি’ ছবিতে চিকিৎসকের চরিত্রের মধ্যে দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে সূচনা হয় তাঁর। এরপর একই পরিচালকের ‘জীবন তৃষ্ণা’ ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চাবুক’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে। প্রবীর মিত্রের স্ত্রী অজন্তা মিত্র ২০০০ সালে মারা গেছেন। প্রবীর মিত্রের এক মেয়ে ও তিন ছেলে।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত হন। স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি।

১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম প্রবীর মিত্র ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। যদিও চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করেও তিনি পেয়েছেন দর্শকপ্রিয়তা।

‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয় পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’সহ চার শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত