ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
শিরোনাম

সুন্দরগঞ্জে নির্মান শেষ না হতেই ব্রীজ পানিতে: ঠিকাদার পলাতক


  সিদ্দিক আলম দয়াল

প্রকাশ :  ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ রাত

সৈরাচারী আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাগবাটোয়ারার ব্রীজ নির্মান কাজ শেষ হওয়ার আগেই  পানিতে ভেঙ্গে পড়ে। এ নিয়ে হইচই ও লাখো মানুষের বিক্ষোভের পর লোক দেখানো তদন্ত শুরু হয়। দুটি  তদন্তকাজ শুরু করলেও দুটিই আটকে গেছে ফাইলে। এদিকে যারা ব্রীজের কাজের সাথে জড়িত তারা বিলের টাকা নিয়ে সেই থেকেই গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনের নজরে এলে তারা শুধু তদন্তটীম করেই খালাস।

ব্রীজতে হলোই না এপিপির টাকার ব্রীজ তৈরীর নামে হরিলুট হলো। এ নিয়ে শুধু তদন্ত টীম হলো কিন্তু কোন সরকারী একশন এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। এলাকাবাসীর দাবী, লাখো মানুষের কপাল পুড়লো, ব্রীজ ভেঙ্গে পড়লো। দিন যতো যাচ্ছে সব আড়ালে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এলাকাবাসীর দাবী এখন আমরা ব্রীজ নির্মানের সাথে জড়িত ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ারদের শাস্তি দেখতে চাই।

তিস্তার অবহেলিত চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের পারাপাররে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ চলেই আসছে। মাঝখানে শাখা নদীর উপর দিয়ে ব্রীজ তৈরী হলেও কাজ শেষের আগেই তা ভেঙ্গে যায়। আওয়ামী লীগের স্থানীয় চার নেতা এই ব্রীজের সাব ঠিকাদার ছিলেন । সেজন্য শুরু থেকেই ব্রীজ নির্মানে লুটপাট শুরু হয়। কর্মকর্তারাও গা ছাড়া ভাবে কাজটি ছেড়ে দেন। ফলে সোমবার বিকেলে ব্রীজটির বাকি অংশ শ্রোতের টানে অর্ধেক ধসে পড়ে।

লাখ লাখ লোকের দীর্ঘদিনের দাবি তিস্তার শাখা নদীর উপরে  উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মানের উদ্যোগ নেয় সুন্দরগঞ্জ উপজলো পরিষদ। নকশাও করে উপজলো প্রকৌশল অধদিপ্তর। নকশাটি করা হয় ত্রুটিপূর্ণ ভাবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচী এডিপির টাকায় ৩৪৪ ফুট র্দীঘ ও ৫ ফুট প্রসস্থ সেতু নির্মানে ব্যয় ধরা হয় ২৭ লাখ টাকা। কাজ পায় গাইবান্ধার সাঘাটা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজ। কাগজে কলমে কাজ ছানা এন্টারপ্রাইজের নামে হলেও কাজটি মুলত উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আশরাফুল আলম তার চামচাদের দিয়ে কাজ করা শুরু করেন।

২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলওে ২০২৪ সালের জানুয়াররি মাঝামাঝি অবধি কাজ না করেই বিলের টাকা তোলা হয়।  এলাকাবাসীর অভিযোগ কাজটি এতে নিম্নমানের করা হয় যে বালু ও রডের ব্যবহার নেই বললেই চলে। ফলে কাজ শুরুর ১ মাসের মাথায় চলতি বছর জুন মাসে ব্রীজটির অর্ধ্যেক অংশ ডেবে যায় ও হেলে পড়ে। জাতীয় পত্রিকায় ছবিসহ নিউজটি ছাপা হলে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ থেকে একটি তদন্তটীম গঠন করা হয়। ব্রীজটি বাঁশ দিয়ে বেধে রাখা হয়। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। ব্রীজটির অর্ধেক অংশ স্রোতের টানে ধসে পানিতে পড়ে যায়। বাধ্য হয়ে উপজেলা পরিষদ থেকে ওই পথে চলাচলকারীদের জন্য ছোট নৌকার ব্যবস্থা করা হয় কিন্তু তিস্তার শাখা নদীর স্রোতের টানে এই নৌকায় চলাচল করতে হচ্ছে জীবনের ঝুকি নিয়ে। তারপরও গুনতে হয় ১০ টাকা করে। মাসে ৩০০ টাকায় পারাপার হতে হয়। এব্যাপারে সুন্দরগঞ্জে একটি তদন্তটীম গঠন করা হলেও তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ার ও দায়িত্বরত কর্মকর্তারা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবী ব্রীজের বদলে নৌকায় পারাপার করতে হচ্ছে টাকা দিয়ে অথচ অর্থ লুটের সাথে জড়িতরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজির হোসেন বলেন, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন থেকেও একটি তদন্ত টীম গঠন করা হয়েছে কিন্তু তদন্তে কি এসেছে তা আমার জানা নাই।

তদন্ত টীমের ফাইল চাপা পড়ে এখন কোথায় কিভাবে আছে তা জানতে চায় গ্রামবাসী ও হাজারও ভুক্তভোগী মানুষ। তবে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ বলেছেন তারা তদন্ত টীম করেছিলেন কিন্তু জেলা প্রশাসনের তদন্তটীমের পর আর তাদের কার্যক্রম থাকেনা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত