শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১
শিরোনাম

বরিশালে শিক্ষার্থী-শ্রমিক দ্বন্দ্বে বাস ঘর্মঘট


  আরবান ডেস্ক

প্রকাশ :  ২৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:২৮ দুপুর

ছবি: সংগৃহীত

ভাড়া নিয়ে বরশিালের ব্রজমোহন কলেজ (বিএম) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরোধের পর রূপাতলীতে বাস ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও শ্রমিকদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছে বাস শ্রমিক সংগঠন।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ৬টা থেকে ধর্মঘট শুরু হয়। এতে বরিশাল থেকে খুলনা, পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া, পাথরঘাটা, ভান্ডারিয়া, ঝালকাঠি, নলছিটি, বেতাগী, বরগুনা, লেবুখালি, বাউফল, দশমিনা, পটুয়াখালি, আমতলী, কুয়াকাটা ও ভোলা রুটে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীরা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন।

রূপাতলী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য বরিশাল বিভাগের ১১টি বাস মালিক সমিতি ও ১১টি শ্রমিক ইউনিয়নের ঐক্য পরিষদ মিলে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। এতে করে ১৬টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ আছে।”

তিনি বলেন, “শ্রমিকরা আজীবন মার খেয়ে যাচ্ছে, আর সকলকে ছাড় দিয়ে যাচ্ছে। গতকাল বিনা কারণে আমাদের ওপর হামলা চালায় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়া দিবে তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু তাদের আইডি কার্ড দেখিয়ে পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনেরাও হাফ ভাড়া করে নেয়। এভাবে হলে আমরা খাবো কী? আমাদেরও তো পরিবার, সন্তান আছে।”

আবুল কালাম আরও বলেন, “ছাত্ররা গতকাল দলবদ্ধভাবে এসে আমাদের ওপর যেভাবে হামলা করেছে তাতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমাদের পিটিয়ে মেরে ফেললেও কেউ দেখবে না। এসব ভয় থেকেই শ্রমিকরা আর সড়কে গাড়ি চালাতে চায় না।”

রূপাতলী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, “গতকাল ঝালকাঠি রুটের একটি বাসে বিএম কলেজের এক ছাত্রীর হাফ ভাড়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। এ বিষয়ে বিচার চাইলে শিক্ষার্থীরা ঝালকাঠি মালিক সমিতির কাছে চাইতে পারতো। কিন্তু রূপাতলীতে বিক্ষোভ করে বাস ভাংচুর, অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা ভয়ে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতে চাইছে না।”

এদিকে শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান বলেন, “গতকাল আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে শ্রমিকরা আজকে সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। তারা বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রাস্তায় চলাচল করতে পারছে না।”

আরেক শিক্ষার্থী ইমতিয়াজুর রহমান বলেন, “আজ আমার পরীক্ষা ছিল। খুব ভোরে বরগুনা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখি বাস চলছে না। এমনকি, অন্য গাড়িতে যেতে চাইলেও যেতে দিচ্ছে না। গত কালকের ঘটনার সূত্র ধরে বাস মালিক, শ্রমিকরা বাড়াবাড়ি করছে।”

বরিশাল থেকে ঝালকাঠি যাবেন নাজমুন্নাহার। তিনি বলেন, "আমি ঢাকা থেকে এসে রূপাতলীতে নেমেছি। এখান থেকে কোনো রুটে বাস চলছে না। দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে আছি।"

আরেক যাত্রী মাসুদ রানা বলেন, "বাস বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছি। মানুষের চলাচলের মাধ্যম বন্ধ করে দিয়ে দাবি আদায় কোনো আন্দোলন হতে পারে না। ঘটনার দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত বলে মনে করি।"

জানা যায়, সকাল থেকে অনেক যাত্রী টার্মিনালে এসে বাস না পেয়ে ফিরে গেছেন। বরিশাল থেকে মঠবাড়িয়া, বরগুনা, কুয়াকাটা রুটের একাধিক যাত্রী বলেন, “পরিবার নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার জন্য রূপাতলী বাস টার্মিনালে এসেছিলাম। এসে শুনলাম শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের দ্বন্দ্বে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মাহিন্দ্রা বা সিএনজি অটোরিকশা রিজার্ভ করে গন্তব্যে যেতে হবে।”

এর আগে, মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে ঝালকাঠি থেকে আসা বিএম কলেজের এক ছাত্রীর সঙ্গে হাফ ভাড়া নিয়ে বাসের স্টাফের কথা কাটাকাটি হয়। এ খবর জানতে পেরে সন্ধ্যার পর ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা রূপাতলী বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দুটি বাস ভাঙচুর করেন। এসময় বাস শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়ে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন। তারা অসৌজন্য আচরণকারী ও হামলাকারী শ্রমিকদের গ্রেপ্তারসহ ৮ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সাড়ে তিন ঘণ্টা পর সড়ক ছেড়ে দেন।

এদিকে, রাতেই কর্মবিরতির ঘোষণা দেন পরিবহন শ্রমিকরা। দক্ষিণের বিভিন্ন রুটের ৮টি মালিক সমিতি শ্রমিকদের কর্মবিরতির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে বলে জানিয়েছে বরিশালের শ্রমিক নেতারা।

এ বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, “শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের দ্বন্দ্বে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।”

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত