বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১
শিরোনাম

দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এখনই সময়


  জাকির আহমদ খান কামাল

প্রকাশ :  ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৪ রাত

"দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা
গড়বে আগামীর শুদ্ধতা"প্রতিপাদ্যকে
সামনে রেখে গত ৯ ডিসেম্বর সারাদেশে পালিত হয় আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস।

নীতি শব্দটি দুর্নীতির সাথে মিশে গেছে। অর্থাৎ দুঃ+ নীতি।[ দুঃ= অভাব] যেখানে নীতির অভাব পরিলক্ষিত হয় সেখানেই দুর্নীতি দানা বাঁধতে শুরু করে। অন্যভাবে বলা যায় যখন কেউ নীতির বিপরীতে অবস্থান করে সে মূলত দুর্নীতিকেই আলিঙ্গন করে। দুর্নীতির আদিতে অভাবই ছিল দুর্নীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট দেখলে বোঝা যায় ভোগবাদী মানসিকতাই গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
সর্বশেষ ঘটে যাওয়া এনবিআরের মতিউর রহমানের "ছাগল কান্ড"অন্যতম।

মানুষ জন্মগতভাবে অনেকগুলো মৌলিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায় এর মধ্যে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল লোভ। লোভ একসময় বিস্তৃতি লাভ করে নীতিহীন লোভে পরিনত হয় তখন আইনের সাথে  ধর্মীয় অনুশাসন ও স্থানীয় প্রথার বাধ্য – বাধকতা তাকে আটকাতে পারে না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় আমাদের ছোট বেলায় দেখেছি কেউ যদি এসএসসি পরীক্ষায় নকল করে ধরা পরত তাহলে সে পরীক্ষার হল থেকে আর বাড়ি না এসে আত্মগোপনে চলে যেত। অথচ বর্তমানে দেখা যায় শিক্ষক কিংবা পিতা মাতাই সন্তানের জন্য নকল সরবরাহ করে। এর মানে হল লোভকে ভয় দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি বরং দুর্নীতি সামাজিক স্বীকৃতি পেয়েছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে সব শ্রেণির ব্যক্তির মধ্যেই ঘুষ গ্রহণের প্রবনতা দেখা যায়। তবে উচ্চ পর্যায়ের কর্তারা মূলত তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে গিয়ে ঘুষ গ্রহণ তাদের অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে। উচ্চবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরাও তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ঘুষ গ্রহনের প্রতিযোগিতায়  লিপ্ত হয়েছে। 

জনৈক হাইব্রিড প্রাথমিক শিক্ষক নেতা মো.আবুল কাসেম চাকুরী দেওয়ার নামে ফেসিষ্ট সরকারের তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যোগসাজশে কোটি কোটি টাকার ঘুষ বানিজ্যে জরিত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বর্তমানে তিনি পদ হারিয়ে বিভাগীয় শাস্তির আওতায় রয়েছেন। তার অনুসারী দালাল চক্র এখনও বিভিন্ন শিক্ষা অফিসে সততার লেবাসধারী অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে ঘাপটি মেরে বসে অনৈতিক সুবিধা লুফে নিতে তৎপর।

একথা স্বীকার করতে অনেকে লজ্জা পাবেন, কিন্তু সহজ সত্য হচ্ছে আমাদের সমাজে এখনও মাঠ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা নিজেকে "সৎ মানুষ" দাবি করে সততার বুলি আউড়িয়ে বক্ষ স্ফীত করে ফেলে। তাদের বেশিরভাগই সততার লেবাসের ভিতরে থাকে অসততার লোভ লালসা। সুযোগের অভাবে তথাকথিত "সৎ মানুষ"। সুযোগ পেলে অথবা পারিপার্শ্বিক অনুচরদের সাহস ধার করতে পারলেই এদের ভেতর লুকিয়ে থাকা নেকড়ে বাঘের আচরণ  বেরিয়ে আসে। এ ধরনের সৎ মানুষ আরও বেশি বিপজ্জনক কারণ এরা লুকিয়ে থাকে আমাদের খুব কাছেই। কখনও বন্ধু, কখনও আত্মীয়, কখনও সমব্যথী বা কখনও সময়ের চাহিদা রূপে। 

সুতারং একথা স্পষ্ট যে লোভ যখন ভয় (আইন, ধর্ম বা স্থানীয় প্রথা) দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না তখন অনিয়ম বেড়ে যায়। অনিয়মের আরেক নাম হল দুর্নীতি। যেমন ধরুন নীতিতে আছে অফিস সময় সকাল ৯ ঘটিকা থেকে বিকেল ৫ ঘটিকা, এখন কেউ যদি কোন বৈধ কারন ছাড়া বিকেল ৪ ঘটিকায় অফিস ত্যাগ করে তাহলে সে দুর্নীতিগ্রস্থ। আবার কেউ সপ্তাহে পাঁচ কর্মদিবসের তিন দিন অফিস করেন দুই দিন বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে অনুপস্থিত থাকেন। 
দুর্নীতি হবার আরেকটি কারন হল আইন যখন মানুষের জীবন – যাপনের উপযোগী করে তৈরি করা না হয়। তাই জীবনের প্রয়োজনে আইনকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সংস্কার করা দরকার। 

১৯৯৫ সাল থেকে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা প্রতি বছর দূর্নীতির সূচক প্রকাশ করে থাকে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল সম্প্রতি প্রকাশিত জরিপে দেখা যায় পৃথিবীব্যাপী প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ইউ এস ডলারের দুর্নীতি হয়। দুর্নীতির হারে ১৪৬ টি দেশের মধ্যে ১০৬ টি দেশের স্কোর হল ১০ এর মধ্যে ৫ বা তার কম, এর মধ্যে আবার ৬০ টি দেশের স্কোর হল ৩ বা তার কম এবং ২ এর কম পেয়েছে বাংলাদেশ সহ বেশ কয়েকটি দেশ। এখানে যার স্কোর যত কম সে তত বেশি দুর্নীতিপরায়ণ দেশ।

জীবন আর বাস্তবতা এখন একটু একটু করে আমাদের আত্মাকে কলুষিত করে তুলছে। অর্থ আর স্বার্থ এখন ভালোবাসা বা বন্ধুত্বের চেয়ে অনেক বেশি  ভারী। এই কলুষতাকে অতিক্রম করার ক্ষমতা সবারই থাকে না। স্বৈরশাসকের দোসরদের ছড়িয়ে দেওয়া লোভে সবাই পা দেয় না। আর লোভ হীন এই তারুন্যের সামনে  দাড়াতে না পেরে দোর্দন্ড প্রতাপশালী স্বৈরশাসক ভূলুণ্ঠিত হতে বাধ্য হয়েছে।

৫ আগস্টের বিপ্লব মূলত: দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের জয়। তাই দুর্নীতি কমানোর জন্য একদিকে যেমন অবৈধ লোভের বিরুদ্ধে কার্যকর ভয় দরকার অন্যদিকে জীবনের প্রয়োজনে দরকার আইনি সংস্কার। বর্তমান সরকারের নীতি নির্ধারনী মহলের কাছে প্রত্যাশা থাকবে দুর্নীতিবাজ ও সততার লেবাসধারীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে আগামীর বাংলাদেশকে আগামী প্রজন্মের জন্য
উপযোগী করে যাবেন।

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত