কোনো সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপ বরদাশত করা হবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
আরবান ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৫ বিকাল
কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপ বাংলাদেশে চলবে না, কেউ চেষ্টা করলে তা বরদাশত করা হবে না বলে স্পষ্ট করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটা বৈশ্বিক ক্যাম্পেইন চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বাংলাদেশ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন এমন বক্তব্য দিলেন তা বোধগম্য নয় বলেও মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
বাংলাদেশ বিষয়ে অপপ্রচার ইস্যুতে সোমবার বিদেশি কূটনীতিকদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিফ্রিং শেষে উপদেষ্টা এ অভিযোগ করেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশি হিন্দুদের নিয়ে ভুল ধারণা তৈরি করছে ভারতীয় গণমাধ্যমের একাংশ। সেটি পরিষ্কার করতে বিদেশি কূটনীতিকদের প্রকৃত পরিস্থিতি জানানো হলো আজ।
সোমবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন করতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বলেন, যদি বাংলাদেশে ভারতীয়দের ওপর হামলা হয়, তবে আমরা তা সহ্য করতে পারি না। আমরা আমাদের লোকজনকে সেখান থেকে ফিরিয়ে (প্রত্যাবাসন) আনতে পারি। ভারত সরকার বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যুটি জাতিসংঘে তুলতে পারে। সেখানে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর কথা বলতে পারে।
সংখ্যালঘু ইস্যুতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, কয়েকটি বিশৃঙ্খলার ঘটনা হয়েছে। দোষীদের শান্তি নিশ্চিত করাই সরকারের লক্ষ্য। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রাখা আমাদের সমাজের অংশ, তা বজায় রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারতীয় মিডিয়ার মন্তব্য ধরে বিভিন্ন মিডিয়া নিউজ করছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ক্যাম্পেইন করছে এবং তারা আমাদের চেয়ে শক্তিশালী তা মেনে নিয়েই পরিকল্পনা করছি। এ সময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দাবি করেন, সরকারের ব্রিফিংয়ে কূটনীতিকরা আশ্বস্ত হয়েছেন।
ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে এ দেশে কেউ কোনো আক্রমণের শিকার হবে না, সেটি নিশ্চিত করেছে সরকার, আর তা করা হবেও না ব্রিফিংয়ে কূটনীতিকদের তা জানানো হয় বলে উল্লেখ করেন তৌহিদ হোসেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটেনের সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেটি একপেশে। এ নিয়ে লন্ডনের সঙ্গে কথা বলবে ঢাকা।
এর আগে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনীতিকদের এ বিষয়ে ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি মিশন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের কাছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ জরুরি ব্রিফিংয়ের অংশ নেন বাংলাদেশে বিদেশি কূটনৈতিক মিশনগুলোর প্রতিনিধিদের পাশাপাশি জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে অব্যাহতভাবে প্রতিবেশী দেশসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নানা রকম বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে দাবি করে আসছে সরকার। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন নিয়ে বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের জেরে সৃষ্ট অস্থিরতার বিষয়টি তুলে ধরা হয় কূটনীতিকদের কাছে। সেই সঙ্গে গ্রেফতার পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ, ইসকনসহ সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের বিষয়েও সরকারের অবস্থান জানানো হয়।
কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে ভারতীয়দের বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকে উসকানিমূলক বলে আখ্যা দিয়েছেন তৌহিদ হোসেন। জানিয়েছেন, পরস্পরের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে ভারতের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে চায় বাংলাদেশ।
ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের টানাপোড়েন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের আগের ও পরের সরকারে পার্থক্য আছে। এটার সঙ্গে অভিযোজনে কোনো দেশের সময় লাগতে পারে।
সার্ক পুনরুজ্জীবিত করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত-তৌহিদ হোসেন : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা-সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে।
মহাসচিব পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে প্রোগ্রামিং কমিটির পরবর্তী অধিবেশন আহ্বান, আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম এবং সার্ক সনদের ৪০তম বার্ষিকী উদযাপনসহ সার্কের চলমান বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি স্বীকার করেন যে সার্ক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মহাসচিবকে বলেন, সার্কের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের (স্থায়ী কমিটি) সভা আয়োজনের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। সার্ক সচিবালয়ের ম্যান্ডেট পূরণে এবং সার্ককে শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশের মহাসচিবকে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।
সোমবার সার্ক মহাসচিব রাষ্ট্রদূত গোলাম সারওয়ারের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় সার্ক সচিবালয়ের পরিচালক (দারিদ্র্য বিমোচন ও তথ্য) হরি প্রসাদ ওদারিও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সার্ক ও বিমসটেকের মহাপরিচালক আবদুল মোতালেব সরকার।