ঢাকা, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ৩১ আশ্বিন ১৪৩১
শিরোনাম

এইচএসসি পরিক্ষার ফলাফলে পূর্বধলা সরকারি কলেজের ধারাবাহিক বিপর্যয়


  নাহিদ আলম, স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশ :  ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৪ দুপুর

নেত্রকোনার জেলায় ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পূর্বধলা সরকারি কলেজ অন্যতম। এক সময় যে কলেজটিতে নিয়মিত ক্লাস হতো, টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ পেতো। শিক্ষার্থীদের কলেজে নিয়মিত ক্লাস করাসহ  মানতে হতো বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা এবং নিয়মকানুন। বর্তমানে সেসবের কোনো বালাই নেই কলেজটিতে। ফলে গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের ফল খারাপ হচ্ছে বলে মনে করছেন কলেজ সংশ্লিষ্টরা।

বিগত তিন বছরের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ছিল ৯৫.৬৩% এবং জিপিএ পেয়েছিল ১৬ জন। পরের বছর ২০২২ সালে ফল এসে দাঁড়ায় ৬০.৮৬% এ। জিপিএ পায় ১১ জন। ঠিক তার পরের বছর অর্থাৎ গত বছর পাশের হার নেমে আসে ৬১.০৩% এ। জিপিএ পায় ১৩ জন। কিন্তু এবার সেটা আনুপাতিক হারে অনেক নিচে নেমে আসে। এবারের রেজাল্টে  পাশের হার দাঁড়ায়  ৫০.৪৩% এ। এ বছর মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ৯৪১ জন পাস করছে ৪৬৯ জন এদের মধ্যে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে শিক্ষার্থী ছিল ৫৪ জন এদের মধ্যে পাশ করেছে ৩২ জন, মানবিকে ৮৪৪ জনে পাশ করেছে ৪২২ জন ও বিজ্ঞান বিভাগে ৪৩ জনের মধ্যে পাশ করেছে মাত্র ১৫ জন। জিপিএ পেয়েছে মাত্র ১১ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৪ জন ও মানবিকে ৭জন । প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে এমন ফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে শিক্ষক ও কলেজ প্রশাসনকে দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকরা।

এদিকে ঐতিহ্যবাহী কলেজের এমন ফলাফলে অসন্তোষ জানিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

একাধিক অভিভাবকের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, সেখানে শিক্ষকরা ঠিকমতো কলেজে আসেন না এবং শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি কোনো খেয়াল রাখেননি। ফলে কলেজের ফলাফলের এ দৈন্যদশা। 

এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, এর পেছনে আমি সম্পূর্ণ দায়ী করবো কলেজ প্রশাসনকে। কোনো নিয়ম-কানুন নেই, ক্লাস হয়না, শিক্ষার্থীরা ক্লাসের প্রতি অমনোযোগী, গুনগত মানসম্মত শিক্ষকের সংকট, যে যার মতো কলেজে আসে-চলে যায়- কোনো কিছুরই ঠিক নেই। কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক নিজেদের ছেলে মেয়ে নিয়ে ময়মনসিংহে থেকে আরাম আয়েশে দিন কাটায়। কলেজে শুধু নামমাত্র হাজিরা দিয়ে থাকে। শিক্ষকদের অবহেলার কারনেই শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল থেকে বঞ্চিত হয়েছে। গতকয়েক বছর ধরে কলেজের বার বার ফল বিপর্যয়ের দায় শিক্ষকরা এড়াতে পারে না। শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। 

এবিষয়ে সুধীনজনরা জানান, কলেজ সরকারি করার পর থেকেই রেজাল্ট গোল্লায় যাচ্ছে। শিক্ষকদের বেতনের স্কেল বাড়লো, কিন্তু শিক্ষার মান কমলো কেনো প্রশ্ন রেখেছেন? শুধু কলেজের গেইট সুন্দর না করে, পড়ালেখার মান সুন্দর করুন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রভাষক জানান, গত কয়েক বছর ধরে ফলাফল বিপর্যয়ের অন্যতম কারন হলো বেশির ভাগ মেধাবী শিক্ষার্থীরা শহরমুখী হওয়া এবং কলেজে মেধাবী স্টুডেন্ট ভর্তি না হওয়া। ফলাফল খারাপ হওয়ার ব্যাপারে শুধু শিক্ষকদের দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু আসল ব্যাপার হচ্ছে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা কলেজে ভর্তির সময় আসে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রাইভেট কোচিংয়ে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সারা বছর কলেজের ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে। এব্যাপারে শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা বেখেয়ালি কোন খোঁজ খবর রাখে না। বরং তারা মূল্যায়ন পরিক্ষায় অকৃতকার্য হলে রাজনৈতিক চাপ দিয়ে পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য তদবির নিয়ে আসে। কিন্তু পরে ফেল করলে দোষ সব কলেজ কর্তৃপক্ষের। এবিষয়ে অভিভাবক কোন ভাবেই দায় এড়াতে পারে না। 

একজন অভিভাবক বলেন, বেশিরভাগ শিক্ষকদের ক্লাসে আকর্ষনীয় উপস্থাপন না হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা দিনদিন ক্লাস বিমূখ হচ্ছে। ফলে ফলাফলে বিপর্যয় নেমে এসেছে। ধারাবাহিক ফলাফল বিপর্যয়ের  দ্বায়ভার কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক মন্ডলী কেউ নিতে চাচ্ছেন না এটা খুবই দু:খজনক।

ফলাফল বিপর্যয়ের বিষয়ে পূর্বধলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আনোয়ারোল হক রতন এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, এবছর রেজাল্ট শুধু আমাদের প্রতিষ্ঠানেই খারাপ হয়নি। ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডের ফলাফল ৬৩.২২ % এবং পূর্বধলা সরকারি কলেজের ফলাফল ৫০.৪৩% যা সন্তোষজনক নয়। তাছাড়া এবছর ফল বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের সুপারিশে ঢালাওভাবে ফেল করা শিক্ষার্থীকে পরিক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়ায়। এখন থেকে প্রাক নির্বাচনী ও নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে তাদেরকে কোন অবস্থাতেই ফরমপূরনের সুযোগ দেওয়া হবে না। এমন কি ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের প্রাক নির্বাচনী ও নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হবে। আর কি কারণে ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে সেটা আসলে এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে যাচাই-বাছাই শেষে বলতে পারবো। যদি আমাদের কাছে মনে হয় যে ওই কারণে ফল খারাপ হয়েছে তাহলে আমরা সেটা শোধরানোর চেষ্টা করবো।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত