ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
শিরোনাম

আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে ভার্চুয়াল প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত


  সুহাদা মেহজাবিন

প্রকাশ :  ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৪ রাত

আগামীকাল আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস-২০২৪ কে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্যাপন জাতীয় কমিটির আয়োজনে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ১৪ অক্টোবর (সোমবার) বেলা ১১ টায় এ ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এবারের প্রতিপাদ্য হলো “দুর্যোগে নারীর সুরক্ষায় দরকার সচেতনতা সৃষ্টি এবং সরকারের কার্যকর উদ্যোগ গস্খহণ”।

আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্যাপন জাতীয় কমিটির সভাপ্রধান শামীমা আক্তারের সভাপতিত্বে  এবং ফেরদৌস আরা রুমীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকদের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশেনের কর্মসূচি কর্মকর্তা খাদিজাতুল কুবরা। এতে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আরও বক্তব্য রাখেন কমিটির সদস্য মথুরা ত্রিপুরা (খাগড়াছড়ি), মোস্তফা কামাল আকন্দ, তোফাজ্জল সোহেল (হবিগঞ্জ), সাইদ (বগুড়া), মো. খলিলুর রহমান (ঝালকাঠি), আইনুন নাহার (ময়মনসিংহ), রত্না বর্মন (খুলনা), ফিরোজা বেগম (লালমনিরহাট), জাফরুল আলম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), স্বর্ণা (বিএনএনআরসি) প্রমূখ।

মূল বক্তব্যে খাদিজাতুল কুবরা বলেন, এবারের পূর্বাঞ্চলের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫১ লাখের বেশি। যেকোন দুর্যোগে নিন্ম আয়ের কিংবা প্রান্তিক মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে তাদের মধ্যে শিশু ও নারীরা আরো বেশি দুর্ভোগে পড়ে। এবারের বন্যায় নারীরা গবাদিপশু ও জিনিসপত্র রক্ষার জন্য রাতের পর রাত ছাদে এবং নৌকায় কাটায়। শিশুরা ভেজা কাপড়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে নারীদের মাসিক স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। পরিষ্কার পানি এবং স্যানিটারি প্যাডের অভাবে তারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন কাটায়। প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা বা চিকিৎসাসেবা অপ্রতুল থাকায় গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়নি। এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিবেশও ছিল খুবই প্রতিকূল। সীমিত জায়গা, মেয়েদের পৃথক টয়লেট না থাকায় এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ বেড়ে যায়। একইসাথে এটা নারীদের নিরাপত্তা এবং মর্যাদার ওপর ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব ফেলে।

মথুরা ত্রিপুরা বলেন, চিকিৎসকরা মনে করছেন পূর্বাঞ্চলে এবারের বন্যায় ভয়, সম্পদ হানির কারণে মন খারাপ, পুষ্টিকর খাদ্য ও যত্নের অভাব এবং চিকিৎসাসেবা ব্যাহত ঐ অঞ্চলের নারীদের গর্ভপাত হয়েছে। তিনি দুর্যোগে গর্ভবতী নারীর জরুরী সেবা নিশ্চিত করার আহবান জানান। 

ফিরোজা বেগম বলেন, কখনো কখনো বেসরকারিভাবে বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্যোগ দেখা গেলেও নারীর জন্য দুর্যোগ পরবর্তী সমন্বিতভাবে কোন সরকারি-বেসরকারি সেবা (শারিরীক, মানসিক, প্রজননস্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সেবা) লক্ষ্য করা যায় না।

ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, এ ধরনের দুর্যোগ পরিস্থিতি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয় কমিউনিটি এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সহযোগিতায় নারী ও কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে ব্যাপকভিত্তিক সচেতনতা কার্যক্রম চালাতে হবে। শামীমা আক্তার বলেন, নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারকে কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য টেকসই এবং কার্যকরী সেবা প্রদানের জন্য গবেষণার ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণের করতে হবে।  

আয়োজকদের পক্ষ থেকে মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, দেশের ৫০ টির বেশি জেলায় উদ্যাপন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও সারাদেশে র‌্যালি, সেমিনার, মানববন্ধন, মেলা আয়োজন এবং গ্রামীণ নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য সম্মাননা প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদ্যাপন করা হচ্ছে।

যেকোন দুর্যোগে নারীর সুরক্ষায় বিষয়টি বরাবরই থাকে অবহেলিত। অথচ এসময় নারীরাও শারিরীক, মানসিক এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা পাওয়ার পূর্ণ অধিকার রাখেন। ন্যূনতম সচেতনতা -সংবেদনশীলতার অভাব এবং পাশাপাশি জরুরি সেবা-সহায়তা না পাওয়ার কারণে তারা দীর্ঘ মেয়াদে শারিরীক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। একারণে দুর্যোগে যেকোন ধরণের ত্রাণ ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনার সময় নারীর সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনার তাগিদ দেন অধিকারভিত্তিক নাগরিক সমাজ প্রতিনিধিবৃন্দ। 

প্রতি বছরের ন্যায় এবারো নিজ নিজ উদ্যোগে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে স্বত:স্ফর্তভাবে আন্তজাতিক গ্রামীন নারী দিবস ২০২৪ পালন করা হবে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলার স্ব-উদ্যোগে প্রতিষ্ঠান গুলোতে কিভাবে গ্রামীন নারী দিবস পালন করে থাকেন তা ভার্চুয়ালি সভায় উপস্থাপন করা হয়। নারী ও সমাজ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি এবং নারীর আর্থ-র্সামাজিক উন্নয়নের নারীরা যেন এগিয়ে আসে এবং নিজেদের অধিকার বাস্তবায়ন করতে পারেন এ লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠান গুলো।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত