পূর্বধলায় মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ
মোস্তাক আহমেদ খান
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ দুপুর
ক্ষেতের পর ক্ষেতজুড়ে সরিষা ফুলের হলদে আভা রাঙিয়ে দিয়েছে দিগন্ত। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ। ওপরে নীল আকাশ এবং জমিনে হরিদ্রাভ বর্ণের সরিষা ফুল-দুয়ে মিলে প্রকৃতিকে মোহনীয় রূপে সাজিয়ে তুলেছে।
ক্ষেত থেকে ভেসে আসা হলুদ বরণ সরিষা ফুলের কাঁচা মিষ্টি গন্ধে চারদিক এখন মাতোয়ারা। এ সময় ফুল থেকে মধু আহরণে ব্যস্ত মৌমাছিরা। ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা মিলছে সরিষার ক্ষেতে। সরষে ফুলে ফুলে বিচিত্র বর্ণের প্রজাপতির উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য প্রকৃতিকে আরো অপরূপা করে তুলেছে।
চলতি রবি মৌসুমে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলায় সরষের আবাদ হয়েছে। সাধারণত নিচু জমিতেই সরষের আবাদ হয়ে থাকে। কার্তিক মাসে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমির আগাছা পরিষ্কার করে ফেলে হালচাষ ছাড়াই নরম জমিতে সরষে বপন করা হয়। শীত কুয়াশায় সরষের ফলন ভালো হয়। রোপণের মাত্র ৮০ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে পাকা সরিষা ঘরে তোলা হয়।
এক সময় ভোজ্য তেলরূপে সরিষার তেলের ব্যবহার ছিল নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার ঘরে ঘরে। ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও পাকস্থলীর বিভিন্ন রোগ, শীত প্রতিরোধে শরীরে মালিশ এবং সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সরিষার তেলের ব্যবহার ছিল অনিবার্য।
তাছাড়া সরষের খৈল গবাদি পশুর প্রিয় খাদ্য এবং সার হয়। সরষে গাছ জ্বালানিরূপে ব্যবহৃত হয়। সরিষার তেলের এত বহুমুখী ব্যবহার সত্ত্বেও কালক্রমে এর চাহিদা হ্রাস পেতে থাকে এবং চাষাবাদের জমিও কমতে শুরু করে। ভোজ্য তেলরূপে আমদানি নির্ভর সয়াবিন ও পাম্প তেলের ব্যাপক বিস্তৃতি লাভের পর সরর্ষের জনপ্রিয়তার ভাটা পড়ে। কিন্তু এ বছরে আমদানিকৃত তেলের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা ফের সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। বাড়তে থাকে সরিষার আবাদের জমির পরিমাণও। পাল্টে যেতে থাকে শীত মৌসুমে দিগন্ত জোড়া মাঠের চিত্র, প্রকৃতি যেন হলদে শাড়িপরা তরুণীর সাজে সজ্জিত হয়। অবারিত সুবিস্তৃত মাঠ।
এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষক সরষের বাম্পার ফলন আশা করছে। কৃষকরা জানান, সরষে কাটা ও মাড়াই শুরু হতে আরো কদিন বাকি। স্থানীয় তেলকলের মালিকরাই সরষের প্রধান ক্রেতা। মধ্যস্বত্তভোগী ফড়িয়াদের খপ্পরে পড়ে কৃষকরা বেশিরভাগ সময় ফসলের ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। বাজারে সর্ষের চাহিদা এবং মূল্য বৃদ্ধির ফলে চাষীরা সর্ষে চাষের দিকে অধিক ঝুঁকে পড়েছে।
পূর্বধলা উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ জোবায়ের হোসেন বলেন, রবি মৌসুমের ফসলের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি প্রনোদনা কর্মসূচির আওতায় কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে। সরিষা চাষে কৃষকদের সকল প্রকার সহযোগিতা করা হচ্ছে। পূর্বধলা উপজেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ৬৮০ হেক্টর জমিতে প্রণোদনাসহ উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।