ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
শিরোনাম

সিলভিয়া প্লাথের কবিতা নারী প্রগতির অন্বেষা


  আরবান ডেস্ক

প্রকাশ :  ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫৮ দুপুর

বিশ শতকের গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক কবি সিলভিয়া প্লাথ। অনেকে তাঁকে নারীবাদী কবি বলেই অভিহিত করেন। তবে ঠকে ঠকে নিজের অভিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাঁর অনেক কবিতায়। পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে, নারীর পরিচয়-সংকট ইত্যাদি নিয়ে তাঁর কবিতা জোরালো হয়েছে। নারীর জন্য অনুপ্রেরণার বিশাল আধার। নারীবাদী সোশ্যাল-অ্যাকটিভিস্ট হিসেবেই সামনে রাখা যায়। তিনি নারীর সীমাবদ্ধতা ও তা থেকে উত্তরণের জন্য অনেক গদ্যও লিখেছেন। কিন্তু আমার আজকের আলোচনা শুধু কবিতা নিয়েই।   

প্রথাগত কবিতার বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অভ্যন্তরীণ অনুভূতির সমন্বয়ে স্বীকারোক্তিমূলক কবিতায় নতুন একটা আবেগ উগরে দেন কবি। এটা কবির মানসিক অবস্থানও বলা যায়। সিলভিয়া প্লাথের স্বীকারোক্তিমূলক কবিতায় (Confessional Poetry)  অবলীলায় বলে দিয়েছেন অনেক গোপনীয় বিষয়। তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক কবিতা সংখ্যাগত দিক থেকে অনেক বেশি। এবং ভাষা ও চিত্রনির্মাণ অনেক শক্তিশালী ও উন্নত। এখানে তিনি নির্ভীকভাবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, আবেগ, সংগ্রাম প্রকাশ করেছেন। এসব কবিতার সফল অগ্রদূত বলা যায় তাঁকে। 

তাঁর আগে বিচ্ছিন্নভাবে অনেকে স্বীকারোক্তিমূলক কবিতা লিখে থাকলেও ধারাবাহিকভাবে অনেক শৈলীগত দিক, বক্তব্য-পষ্টীকরণ ও শক্তিশালীকরণ ইত্যাদি দিক থেকে সিলভিয়া প্লাথ আলোচনার মূলকেন্দ্র। তিনি নারী হওয়ায় ও বাস্তব অভিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ (বাস্তবতা আরও বেশি ও ঝাঁজালো) করে বিশ্বের নারীবাদীদের ভরকেন্দ্রে রয়েছেন। বলে রাখি কনফেশনাল পোয়েট্রি মুভমেন্ট আমেরিকায় ১৯৫০ দশকের মাঝামাঝি শুরু হয়। রবার্ট লয়্যাল, সিলভিয়া প্লাথ, অ্যানি সেক্সটন এ-আন্দোলনের প্রবক্তা। টি. এস এলিয়ট, ডব্লিউ. বি ইয়েটস প্রমুখ এ-আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এরা সবাই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কবিতায় প্রকাশ (কিছুক্ষেত্রে রাখঢাক না করেই) করেছেন। আজকের ‘মি টু’ ইত্যাদি আন্দোলন অনেকটা এ ধারাবাহিকতার নতুন সংস্করণ।    

মাত্র ৩০ বছরের জীবন তাঁর। ব্রিটিশ কবি টেড হিউজ তাঁর স্বামী ছিলেন। কিন্তু পরিবার ও সমাজের পাশাপাশি স্বামীর সংসারে সুখে ছিলেন বলা যায় না! ফলে সহজেই কবিতা ও লেখায় নারীর অবজ্ঞা, অবহেলা, নেতিবাচক-ধারণা ইত্যাদি বাস্তবজীবনের সঙ্গে মিশিয়ে নারীদের স্কেচ সৃষ্টি করতে পেরেছেন। Daddz, Ladz Layarus, Ariel, The Applicant, Kindness, The Arrival of the Bee Box  ইত্যাদি কবিতায় নারীর অন্তর্নিহিত শক্তি, বিবাহপরবর্তী নারীর নির্ভরশীলতা, নারীর স্বকীয়তা ও সৃষ্টিশীলতা, পুরুষের ওপর নারীর প্রতিশোধ, নারীর স্বাধীনতা সর্বোপরি নারীপ্রগতি ও নারী-উন্নয়নের চিত্র ফুটে উঠেছে।

I lay my ear to furious Latin.
I am not a Caesar.
I have simply ordered a box of maniacs.
They can be sent back.
They can die, I need feed them nothing, I am the owner.
[The Arrival of the Bee Box]

The Arrival of the Bee Box কবিতায় ‘মৌমাছি’কে প্রতীকী হিসেবে ব্যবহার করেছেন। উগ্র ও বিপজ্জনক হিসেবে মৌমাছিকে বর্ণনা করা হয়েছে। ‘The Applicant  Poem’ কবিতায় সামাজিক আদর্শ/প্রথা, লিঙ্গভূমিকা আলোচনা করা হয়েছে। বাস্তবতা স্মরণ রেখে সিলভিয়া প্লাথ নারীকে একটি বস্তু বা গার্হস্থ্য যন্ত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। উপহাসমূলক ব্যঙ্গ সুর ব্যবহার করে নারীর অবদান/মূল্যবান/কার্যকারিতা নিয়ে উপস্থাপন করেছেন। অংশবিশেষ তুলে ধরা যাক:

১. First, are you our sort of a person? (আপনি কী আমাদের মতো মানুষ?)
২. A living doll, everywhere you look. It can sew, it can cook. (একটি জীবন্ত পুতুল, সব জায়গায় আপনিই তাকান। এটি সেলাই করতে পারে, এটি রান্না করতে পারে)
৩. It can talk about things you like, to entering you. (এটি আপনার পছন্দের জিনিসের মতো কথা বলে, আপনাকে বিনোদন দেয়)
৪. Will you marry it, marry it, marry it. (আপনি কি একে বিয়ে করবেন, একে বিয়ে করবেন, একে বিয়ে করবেন?)
 প্লাথের Ariel কবিতা-সংকলন ব্যক্তিগত মানসিক-যন্ত্রণার বিষয়াদি জোরালোভাবে উঠে এসেছে। ১৯৬২ সালে ‘দ্য নিউ ইয়র্কারে’ প্রকাশিত প্লাথের টিউলিপস কবিতা প্রতীকী। একটি হাসপাতালে টিউলিপের তোড়া গ্রহণকারী একজন মহিলাকে চিত্রিত করা হয়েছে। নার্সরা ‘উজ্জ্বল-সুচ’ দিয়ে মহিলাকে অসাড় করে। তিনি অ্যানেস্থেসিয়ায় আত্মহত্যা করেন। কবির কাছে সূর্যের চোখ এবং টিউলিপের চোখ যেন একই সমান্তরালে। যেন টিউলিপগুলি তাকে আঘাত করছে, তাকে দেখছে এবং তার অক্সিজেন চুষে নিচ্ছে।   

I see myself, flat, ridiculous, a cut-paper shadwo
Between the eye of the sun and the eyes of the tulips
And I have no face, I have wanted to efface myself.
The vivid tulips eat my oxygen.
 ... And I am aware of my heart: it opens and closes
Its bowl of red blooms out of sheer love of me.
The water I taste is warm and salt, like the sea,
And comes from a country far away as health
[Tulips]

নারীবাদী কবিতা, নারীর প্রতি অবহেলা, নারী প্রগতি ও উন্নয়নের কবিতা সিলভিয়া প্লাথকে আলাদা ও সাফল্যমণ্ডিত করেছে। তাঁর কবিতায় নিজের মানসিক অবস্থা, মাতৃত্ব, পরিবার এবং বিভিন্ন সম্পর্ক সূক্ষ্মভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর কবিতা অসামান্য এবং দক্ষতাপূর্ণে নান্দনিক ভাষা দিয়ে সৃষ্টি। কখনওবা তিনি বিভিন্ন প্রতীকীর আশ্রয় নিয়েছেন। বাস্তবতা হলো, প্লাথ কী মূল্যরত্ন রেখে গেছেন, তার সবই আমরা এখনও জানি না। কবিতার সৌন্দর্য ও গভীর বক্তব্যের থিম পাঠককে মুগ্ধ করে। চমৎকার কারুকাজে নির্মিত কবিতা বিশ্বসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত