শেরপুরের অর্ধশত গ্রামে বসে বৈশাখী মেলা

রফিক মজিদ, শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১১ দুপুর

বাঙালির সঙ্গে মেলার মিতালি দীর্ঘদিনের। আমরা এ ঐতিহ্য ধারণ করে চলেছি যুগ যুগ ধরে। এ ইতিহাস কত পুরোনো, কবে ও কীভাবে এর সৃষ্টি সেসব তথ্য অজ্ঞাত। তবে এটি যে আবহমান বাংলার একটি প্রাচীন ঐতিহ্য-এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে মেলার উপলক্ষ অনেক। হিন্দু সম্প্রদায়ের রথযাত্রা, দোলযাত্রা, অষ্টমী ও বারুনী স্নানযাত্রা, দুর্গাপূজা, কালীপূজা, জন্মাষ্টমী, পৌষসংক্রান্তি, চৈত্রসংক্রান্তি প্রভৃতির পাশাপাশি পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মেলা বসে। একসময় বাঙালির জীবন মানের সাথে মেলা ছিল অতপ্রতোভাবে জড়িত। কিন্তু বিশ্বায়ন ও আধুনিকতার কারণে বাঙালির প্রাণ থেকে এই মেলার জৌলুষ কমে যাচ্ছে। এখন প্রকৃতির বিনোদনের চেয়ে নেট দুনিয়ার বিনোদন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তারপরও বাঙালির প্রাণে-মনে যতটুকুই বাঙালিয়ানা বেঁচে আছে ততটুকুন মধ্যেও এখনো টানে গ্রামীণ মেলা। বিশেষ করে বৈশাখী মেলা অন্যতম।
প্রতিবছরের ন্যায় শেরপুরে ১৪ এপ্রিল বা বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখে সেজে ওঠে বাঙালিয়ানায়। শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে বসে বৈশাখী মেলা। সারা দেশের মতো শেরপুরের প্রায় সাড়ে ৭০০ গ্রামের মধ্যে প্রায় অর্ধশত গ্রাম বা হাটবাজারে বসে এ বৈশাখী মেলা। এ উপলক্ষে গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরেই উৎসবের আমেজ বিরাজ করে । মেলায় দোকানিরা দু’একদিন আগে এসেই স্ব-স্ব দোকানের জায়গা দখল করে থাকেন। আবার কোনো কোনো স্থানের দোকানি পয়লা বৈশাখের আগের রাতে পসরা সাজানোর কাজ শুরু করেন।
মেলার দোকানিদের পাশাপাশি মুড়ি-মুরকি, সাজ, মুড়ি ও তিলের মোয়া, লাড়ু, গজাসহ বিভিন্ন মিষ্টি এবং মুখরোচক খাবার প্রস্তুতকারীরাও বসে নেই। তারাও দিনরাত খেটে তৈরি করছে এসব খাবার। মেলা শুরু হওয়ার সাত দিন আগেই বিভিন্ন স্থানের পাইকার এসে এসব খাবার কিনে নিয়ে যায় বলে জানালেন খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারীরা।
মেলায় খাদ্যদ্রব্য বিক্রির পাশাপাশি মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজস ও খেলনা তৈরির কারিগর মৃৎশিল্পীরাও ব্যস্ত সময় পার করে বৈশাখের আগে আগে । তারাও বছরে একবার বাড়তি আয়ের জন্য মাটি দিয়ে বিভিন্ন খেলনা, শো-পিস, গয়না ও তৈজসপত্র তৈরি করে মজুত করে রাখেন। কারণ, মেলা শুরু হওয়ার সাত থেকে ১৫ দিন আগে এসব পণ্য বিক্রি শুরু হয় বলে জানালেন শহরের বয়ড়া পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা।
স্থানীয় বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়, জেলায় প্রতি বছর প্রায় অর্ধশত স্থানে বা গ্রামে এ বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এসব মেলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থান হলো: সদর উপজেলার পাকুরিয়া ও কামারিয়া ইউনিয়নের ঘুষের মাঠে, তিরসা, বাকেরকান্দা, তিলকান্দি, গাজিরখামার ইউনিয়নের গাজিরখামার বাজার। নকলা উপজেলার নকলা হাইস্কুল মাঠ, গনপদ্দি হাইস্কুল মাঠ, নারায়নখোলা বেড় শিমুলগাছ প্রাঙ্গণ, বানেশ্বর্দী, টালকি, চন্দ্রকোনা, রিহিলা। নালিতাবাড়ী উপজেলার কুশলনগর, খলচান্দা, সমশ্চুড়া, গারোকোনা, তন্তর, নয়াবিল, চাটকিয়া। ঝিনাইগাতী উপজেলার তিনআনী বাজার, ঘাগড়া, বনগাঁও, ধানশাইল, গান্ধীগাঁও। শ্রীবর্দী উপজেলার ঝগড়ারচর, কর্ণঝড়া ও রানীশিমুল গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় জমজমাট বৈশাখী মেলা। এসব মেলায় কোথাও কোথাও কেবল কেনাকাটার পসরা বসলেও অনেক স্থানে চলে ঘোড় দৌড়, লাঠি খেলা, কুস্তিসহ দেশীয় নানা খেলাধুলার প্রতিযোগিতা। তবে ইদানিং মেলায় আধূনিকতার ছোয়ায় চলে র্যাফেল ড্র ও আধূনিক নাচ-গানের আসরও বসে। এছাড়া কোথাও কোথাও আবার রাতে বসে বাউল গানের আসর ।
বৈশাখী মেলা উপলক্ষে অনুষ্ঠিত উল্লিখিত বিভিন্ন ধরনের খেলার খেলোয়াড় এবং বাউল গানের দলের শিল্পীরাও প্রস্তুতি থাকে মেলার দিন প্রতিযোগিতা ও গানের আসরে অংশ নেওয়ার জন্য। অনেক খেলোয়াড় ও গানের শিল্পীদের টাকা দিয়ে আগাম বায়না করে রাখে বলে জানালেন বেশ কয়েকটি মেলা কমিটির সদস্য।