রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩ ফাল্গুন ১৪৩১
শিরোনাম

চোরাই পথে আসা ভারতীয় চিনিতে সয়লাব পূর্বধলার প্রতিটি বাজার


  মো: জায়েজুল ইসলাম

প্রকাশ :  ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৩১ দুপুর

চোরাইপথে আসা ভারতীয় চিনিতে সয়লাব নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার প্রতিটি বাজার। অবৈধ পথে আসা এসব চিনি দেদারছে বিক্রি হলেও যেন দেখার কেউ নেই। আবার কারবারীরা মানহীন এসব চিনি শুল্কবিহীন কমদামে কিনে আনলেও খুচরা বাজারে তেমন একটা প্রভাব পড়ছে না। ভারতীয় এসব অবৈধ চিনির দাপটে দেশীয় চিনি শিল্প মার খাচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ীরা।

পূর্বধলা সদর, জারিয়া, হোগলা, শ্যামগঞ্জ, হিরনপুরসহ বেশ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে বাজারের প্রতিটি মুদি ও স্টেশনারী দোকানে ভারতীয় চিনি বিক্রি হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্বধলা বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ইন্ডিয়ান চিনির দাম দেশীয় চিনির চেয়ে কম থাকায় বেশি লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা ইন্ডিয়ান চিনি বিক্রিতে ঝুকছে বেশি। দেশীয় এককেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২৫টাকা থেকে ১৩০টা দরে। পাশাপাশি ইন্ডিয়ান এককেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। অবৈধ পথে আসা এসব ইন্ডিয়ান চিনির মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

চা বিক্রেতা মো: নাসির উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়িক প্রয়োজনে প্রতিদিন চিনি কিনতে হয়। তাই মানের বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে বাজারে কমদামে পাওয়া চিনি ক্রয় করে থাকি। তবে এসব চিনিতে কি রয়েছে জানিনা, মাঠিতে পড়ে থাকলে পিঁপড়াও খেতে চায় না।

আর এক চা বিক্রেতা মো: আব্দুল কদ্দুছ বলেন, মাঝে মাঝে ইন্ডিয়ান চিনিতে প্রচুর ময়লা থাকে এবং মুখে নিলে লবন লবন লাগে।

নেত্রকোণা জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলার ভারতীয় সীমানা দিয়ে চোরাই পথ দিয়ে ভারতীয় চিনি দেশে প্রবেশ করে। পূর্বধলা উপজেলার দুর্গাপুর-জারিয়া-শ্যামগঞ্জ রোডদিয়ে প্রবেশ করা এসব চিনি কালোবাজারের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন বাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে। নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া, শ্যামগঞ্জ, হোগলা, পূর্বধলা সদরসহ প্রতিটি বাজারে প্রায় প্রতিদিন দুর্গাপুর থেকে উপজাতি সম্প্রদায়ের লোকজন অটো রিক্সায় করে চিনি বিক্রি করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক এক উপজাতি বিক্রেতা জানান, তারা সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ভারতীয় চিনি ৭০-৮০টাকা দরে কিনে এনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে থাকেন। এছাড়া চিনি ব্যবসার সাথে জড়িত বড় চিনি কারবারিরা রাতের
আঁধারে চোরাই পথে আসা ভারতীয় চিনি ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায়। এসব চিনি বোঝাই ট্রাক কালেভদ্রে দু একটি আইনশৃংখলাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েলেও অদৃশ্য কারনে বেশিভাগই থাকে অধরা।


পূর্বধলা বাজারের বাসিন্দা মো: ইসলাম উদ্দিন খান বলেন, ভারতীয় চোরাই চিনিতে আমাদের বাজারগুলো দখল হয়ে গেছে। চিনি ছাড়াও প্রতিনিয়ত আরও অনেক পণ্য চোরাইপথে আসছে। সীমান্তে যারা দায়িত্বে আছেন, তারা এসব চিনি ঢোকার সুযোগ করে দিচ্ছেন। না হলেও এভাবে চোরাইপণ্য বৈধ পণ্যের মতো বাজার দখল করতে পারতো না। তিনি আরও বলেন চোরাইপথে কম দামের চিনি এলেও জনগণকে বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দ্রুততম সময়ে এসব চোরাইপথে আসা চিনির কারবার বন্ধ করা বৈধভাবে চিনি আনার দাবী জানান তিনি।

অনলাইনে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি ৪৫ রুপি, যা বাংলাদেশের হিসাবে ৭০ টাকার মতো। অথছ অবৈধপথে আশা এসব চিনি দোকান থেকে অনেক বেশি দামে কিনতে হয়।

পূর্বধলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ রিয়াদ মাহমুদ বলেন, অবৈধ পথে আসা ভারতীয় চিনি কারাবারের সাথে যারা জড়িত তাদের ধরতে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত আছে। এছাড়া মাঝে মধ্যে বিশেষ অভিযানে তাদের ধরে মামলা দেওয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত