শেরপুরের বিশিষ্ট কবি মার্জেনা চৌধুরী আর নেই !
রফিক মজিদ, শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০২ দুপুর
দেশব্যাপী সুপরিচিত শেরপুরের নকলা উপজেলার কৃতি সন্তান কবি মার্জেনা চৌধুরী মারা গেছেন (ইন্না নিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহী রাজিউন।) তিনি জেলার নকাল উপজেলার ২নং নকলা ইউনিয়নের মধ্যনকলা (ডাকাতিয়াকান্দা) গ্রামের মৃত হুরমুজ আলীর ৮ সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন কবি মার্জেনা চৌধুরী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৪৯ বছর। তিনি স্বামী, ২ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
পরিবার সূত্র জানা গেছে, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বের) বিকেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সন্ধ্যা ৫টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মরহুমার জানাজা নামাজ ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় মধ্য নকলা (ডাকাতিয়াকান্দা) গ্রামে নিজের বাবার বাড়িতে অনুষ্ঠিত হবে এবং তাঁর বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
পাঠকের চাহিদার দিক বিবেচনা করে গুনগত মান বজায় রেখে একের পর এক কবিতা, ছড়া আর প্রগতিশীল লেখার মধ্য দিয়ে তিনে দেশবাসীর মনে স্থান করে নিয়ে ছিলেন।
মার্জেনা চৌধুরী বাড়ির অদূরে ডাকাতিয়াকান্দা সরকারি প্রাাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে নকলা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে (পূর্বনাম নকলা গার্লস স্কুল) এ ভর্তি হন। সেখান থেকে এসএসসি পাসের পর নকলা হাজী জালমাহমুদ কলেজ (বর্তমানে সরকারি) থেকে এইচএসসি ও স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। শিক্ষার্থী থাকা অবস্থাতেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন।
তৎকালীন জনপ্রিয় পত্রিকা “সাপ্তাহিক শেরপুর” ও “সাপ্তাহিক মদিনা” পত্রিকায় তার অসংখ্য লেখা প্রকাশ হয়েছে। তার প্রথম কবিতা “একুশ আমার” যা নব্বই দশকের সব পেশাশ্রেণী পাঠকের মনে স্থান করে নিয়েছিলেন।
এরপরে তার লেখা গুলোকে বই আকারে প্রকাশের লক্ষ্যে শুরু করেন কবিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি। তার লেখা গ্রন্থের মধ্যে- বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রাচীন ও মধ্যযুগ, কবি কায়কোবাদ, শহীদের কারবালা (কাব্যগ্রন্থ), কয়েকটি তারা (কাব্যগ্রন্থ) এসব ছিলো উল্লেখযোগ্য।
১৯৯৫ সালের ১২ জানুয়ারি ঢাকার ধানমন্ডি এলাকাস্থ এক সম্ভান্ত্র চৌধুরী পরিবারের সন্তান বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিবি)-এর ইংরেজী খবর পাঠক (সাবেক) মোঃ শামস চৌধুরী সাদী-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার জীবন শুরু করেন। শৈশব কালের জীবন কাটানো নিজ গ্রামের বৈচিত্রকে কেন্দ্র করে লেখা তার সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ “শঙ্খ নদীর নীল পদ্ম।”
এই মৃত্যুতে শেরপুরের সাহিত্য কবিতার জগতে এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হলো বলে অনেকে মনে করছেন। তাঁর মৃত্যুতে বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ও উপজেলার কবি, গাঙচিল সাহিত্য সাংস্কৃতি পরিষদসহ অন্যান্য সাহিত্য সংগঠন, নকলা প্রেসক্লাব, বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সেচ্ছাসেবী ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ও ব্যক্তি পর্যায়ে আলাদা ভাবে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
শোক প্রকাশকারী সকলেই মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনার পাশাপাশি মরহুমার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।