সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২
শিরোনাম

চাকুরিক্ষেত্রে বায়োটেকনোলজির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক


  মো: জায়েজুল ইসলাম

প্রকাশ :  ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:২৫ বিকাল

"যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দেশে ৭০ ভাগ চাকুরীর বিজ্ঞাপনে আবেদন করতে দেয়া হচ্ছে না বায়োটেকনোলজি গ্রাজুয়েটদের"। পুরোবিশ্বে বায়োটেকনোলজি এই মুহূর্তে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় চাকরি, গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্র হিসেবে গণ্য হলেও বাংলাদেশে বায়োটেকনোলজির চাকরিক্ষেত্র পর্যাপ্তভাবে সৃষ্টি হচ্ছে না, অন্যদিকে বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করতে দেওয়া হচ্ছে না এই সম্পর্কে সচেতনতার অভাবে। এই সমস্যা দূরীকরণে কী করা যায় তা নিয়েই অনুষ্ঠিত হলো নেটওয়ার্ক অব ইয়ং বায়োটেকনোলজিস্টস অব বাংলাদেশ (এনওয়াইবিবি) এর আয়োজনে একটি গোলটেবিল বৈঠক। অন্যদিকে দেশের ৫০ ভাগ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বায়োটেকনোলজির সিলেবাস ও পঠনপদ্ধতি সম্পর্কে না জানায় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বিশেষায়িত এই শিক্ষার্থীদের অনেক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতেই আবেদন করতে দেয়া হয় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র মিলনায়তনে দুপুরে আয়োজিত এই গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ ছগীর আহমেদ।

এছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ারুল আজীম আখন্দ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.এস এম আব্দুল-আউয়াল, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসান।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনওয়াইবিবি- এর পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান। মূল উপস্থাপনায় দেখানো হয় দেশে প্রতিবছর ১৭০০ বায়োটেকনোলজি গ্র্যাজুয়েট স্নাতক সম্পন্ন করছে। এর ৪৫ ভাগই বিষয় সংশ্লিষ্ট কোনো চাকরিতে যুক্ত হতে পারছেন না। এছাড়াও বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানেই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিষয়ের স্নাতকদের আবেদন করতে দেওয়া হয় না। অন্যদিকে দেশের ৫০ ভাগ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বায়োটেকনোলজির সিলেবাস ও পঠনপদ্ধতি সম্পর্কে জানে না। সে কারণে অনেক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতেই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের আবেদন করতে দেয়া হয় না। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম আব্দুল-আওয়াল ওয়ান স্টপ সলুশান হিসেবে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজিকে কার্যকর ভূমিকা পালন করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

এছাড়াও বায়োটেকনোলজির গ্র্যাজুয়েটদের বিভিন্ন চাকরিক্ষেত্রের সম্ভাবনা এবং বর্তমানে নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সুমাইয়া ফারাহ খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল হাসান। বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে বায়োটেকনোলজির অবস্থান সম্পর্কে মো. মনিরুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস বলেন ফার্মা ইন্ডাস্ট্রিতে বায়োটেকনোলজি কে পরিচিত করাতে কোলাবোরেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। 

এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন বিসিএসাইআর- এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ নুরুল হুদা ভূঁইয়া, বায়োটেক কনসার্ন কোম্পানির সিইও এম এ ওয়াদুদ, আইইডিসিআর এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরিফ খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মাহমুদা কবির শাওন, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম সিজান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সরূপ হাসান। অতিথিরা এসব সংকট নিরসনে  বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সমন্বিত উদ্যোগের কথা বলেন এবং একই সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বায়োটেকনোলজির পাঠ্যক্রম এবং ব্যবহারিক দক্ষতা সম্পর্কে অবহিত করার প্রয়োজনীয় দিক তুলে ধরেন। এই অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. মুশতাক ইবনে আয়ুব। এই আয়োজনের সহযোগীতায় ছিল বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব বায়োটেকনোলজি গ্রাজুয়েটস (BABG) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি ক্লাব এবং পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল বায়োটেক কনসার্ন।
এনওয়াইবিবি এর প্রাক্তন সিইও এবং আইইডিসিআর এর গবেষণা কর্মকর্তা মোঃ আরিফ খান বলেন, বর্তমানে জাতীয় কৃষি গবেষণা ব্যবস্থার (NARS) আওতাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বায়োটেকনোলজি বিভাগ থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের আবেদন করার সুযোগ সীমিত বা অনির্দিষ্ট। বায়োটেকনোলজি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য NARS-ভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে আবেদন করার সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম আব্দুল-আওয়াল 
ওয়ান স্টপ সলুশান হিসেবে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজিকে কার্যকর ভূমিকা পালন করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত